আগামীর সম্ভাবনা
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: সিলেটের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি প্রবাসীরা। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিযোগ—নাড়ির টানে দেশে ফিরলেও অনেক সময় তাদের পড়তে হয় নিরাপত্তা ঝুঁকি ও আধুনিক নাগরিক সুবিধার অভাবে।
এই সংকট নিরসনে সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার আলমের ঘোষণা করা ‘প্রবাসী শহর’ প্রকল্পটি কেবল একটি আবাসন প্রকল্প নয়, বরং এটি সিলেট অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এক বিশাল আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে।
শনিবার কবি নজরুল অডিটরিয়ামে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘প্রবাসী সম্মাননা ২০২৫’ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক জানান, শহরের পাশেই প্রায় তিন হাজার একর জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে এই বিশেষায়িত শহর। এটি মূলত প্রবাসীদের সেই অভিযোগের একটি বলিষ্ঠ সমাধান, যেখানে তারা বিদেশের মতো উন্নত জীবনযাত্রার স্বাদ পাবেন দেশের মাটিতেই।
প্রশাসনের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে কারণ:
নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: প্রবাসীরা দেশে এসে প্রায়ই জমি দখল বা চুরি-ছিনতাইয়ের আতঙ্কে থাকেন। একটি পরিকল্পিত ও সুরক্ষিত জোনে বসবাসের সুযোগ তাদের এই ভীতি দূর করবে।
নতুন প্রজন্মের সংযুক্তি: বর্তমান প্রজন্মের প্রবাসীরা যারা আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে দেশে আসতে চান না, তাদের জন্য এটি হবে এক বড় আকর্ষণ।
বিনিয়োগের সুযোগ: তিন হাজার একরের এই শহরটি বাস্তবায়িত হলে আবাসন খাতে প্রবাসীদের বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে।
স্থানীয় ও প্রবাসী নাগরিকরা কী বলছেন?
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। লন্ডন প্রবাসী কমিউনিটি নেতা জনাব রফিক উদ্দিন বলেন, “আমরা দেশে বড় বড় বাড়ি করি ঠিকই, কিন্তু সেখানে যাওয়ার রাস্তা বা পরিবেশ সবসময় অনুকূল থাকে না। ডিসি সাহেবের এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে আমাদের সন্তানরা অন্তত নিরাপত্তার অভাবে দেশে আসতে মানা করবে না। এটি আমাদের জন্য এক পরম স্বস্তির খবর।”
সিলেট নগরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী করিম আহমেদ জানান,”সিলেট শহর এখন প্রচণ্ড জনাকীর্ণ। শহরের পাশেই যদি এরকম একটি আধুনিক স্যাটেলাইট টাউন গড়ে ওঠে, তবে মূল শহরের ওপর চাপ কমবে এবং সিলেটের অর্থনৈতিক মানচিত্র বদলে যাবে। আমরা প্রশাসনের এই সাহসী পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই।”
ছয় মাসের মধ্যে কাজ শুরু হওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা যদি যথাযথ তদারকির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে এটি হবে বাংলাদেশের অন্যতম সফল ‘থিম-ভিত্তিক’ শহর। সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে জরিপ কাজ শুরু করেছেন, যা প্রকল্পের গুরুত্বকেই ফুটিয়ে তোলে। তবে প্রকল্পের স্বচ্ছতা এবং সময়মতো হস্তান্তর নিশ্চিত করা প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। যদি এটি সফল হয়, তবে কেবল সিলেট নয়, সারা দেশের প্রবাসীদের জন্যই এটি একটি ‘রোল মডেল’ হিসেবে গণ্য হবে।










