বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: শিবগঞ্জ উপজেলায় আবু সুফিয়ান (২২) নামের এক তরুণকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। গত বুধবার বিকেলে উপজেলার উমরপুর ঘাট এলাকায় এই বর্বরোচিত ঘটনা ঘটে। চিকিৎসকদের মতে, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ওই তরুণের দুই হাত ও এক পা শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
আহত আবু সুফিয়ান শিবগঞ্জ উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে। স্বজনদের দাবি, এক কিশোরী আত্মীয়কে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ জানানোকে কেন্দ্র করেই এই হামলার সূত্রপাত।
আবু সুফিয়ানের মা সুফিয়া বেগম অভিযোগ করেন, সম্প্রতি তাদের এক কিশোরী স্বজনকে অপহরণের ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে এবং অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করে। তবে জামিনে বেরিয়ে এসে ওই যুবক পুনরায় মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করেন।
গত বুধবার বিকেলে সুফিয়ান উমরপুর ঘাটে গিয়ে ওই যুবককে শাসালে স্থানীয় জামায়াত-শিবির কর্মী হিসেবে পরিচিত আবদুর রাজ্জাক ও শাহ আলমসহ কয়েকজন ওই যুবকের পক্ষ নেন। তারা সুফিয়ানকে ধরে রাজ্জাকের দোকানের সামনে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ফেলেন এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে কোপাতে থাকেন।
হাসপাতালে যন্ত্রণাকাতর সুফিয়ান জানান, তিনি হামলাকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে তিনি শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন। তার মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলে হাতজোড় করে বারবার বলেছে, ‘হামি দোষী লয়, আমাকে মারবেন না’। কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেনি।”
গুরুতর অবস্থায় সুফিয়ানকে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার ক্ষত অত্যন্ত গভীর এবং সেখানে একাধিক অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। উন্নত চিকিৎসার জন্যই তাকে দ্রুত ঢাকা পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় সুফিয়ানের বাবা রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১২ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি—শাহ আলম (২২) ও তার ভাই আবদুর রাজ্জাককে (২৩) গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। আবদুর রাজ্জাক পেশায় একজন মাদ্রাসা শিক্ষক।
উপজেলা জামায়াতের আমির সাদিকুল ইসলাম এ ঘটনায় তার কর্মীদের সম্পৃক্ততার দাবি অস্বীকার করেছেন। তিনি বিষয়টিকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে ভুক্তভোগী পরিবার এবং স্থানীয় অনেকের দাবি, হামলাকারীরা সক্রিয়ভাবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির জানান, দুইজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।










