মওলানা মোহাম্মদ কাউসার
বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে নতুন হিজরি বছর ১৪৪৭। সূর্যাস্তের পর ১ মহররমের চাঁদ দেখা যাওয়ার মাধ্যমে নতুন বছরের সূচনা হয়। সময়ের আবর্তনে এলো আরেকটি নববর্ষ—যা মুসলমানদের কাছে শুধুই ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠা বদলের বিষয় নয়, বরং এক আত্মবিশ্লেষণের সুযোগ।
হিজরি সন গণনার সূচনা হয়েছিল মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র হিজরতের স্মৃতিকে কেন্দ্র করে। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মক্কা থেকে মদিনায় তার গমন শুধু ভৌগোলিক নয়, ছিল ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার পূর্ণ প্রতিষ্ঠার এক যুগান্তকারী মুহূর্ত। সেই থেকে প্রতিটি হিজরি বছর মুসলমানদের মনে নতুন প্রত্যাশা, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর প্রতি ফিরে যাওয়ার বার্তা বহন করে।
বাংলাদেশের ইসলামি ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এ দিনটিকে স্মরণ করতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন মসজিদে হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ মোনাজাত ও বয়ানের ব্যবস্থা করা হয়। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান রোজাও রাখেন ১ মহররম উপলক্ষে।
তবে এই দিনটি সরকারি বা সামাজিকভাবে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন হয় না বললেই চলে। অনেকেই জানেন না যে, এটি একটি আত্মসংশোধনের দিন—বিনয় ও ধৈর্য ধারণের, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সত্যের পথে চলার প্রতিজ্ঞার দিন। নবীজির জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর ও সাহসিকতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল হিজরত, যা পরবর্তী প্রজন্মকে দিয়েছে সাহস ও নেতৃত্বের অনুপ্রেরণা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, হিজরি নববর্ষ কেবল একটি ধর্মীয় ঘটনা নয়, বরং একটি সভ্যতাগত রূপান্তরের স্মারক। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সময়ের গতিধারায় নৈতিকতা, মানবতা ও আত্মত্যাগ কখনও বিস্মৃত হয় না। বরং, সেই আদর্শেই গড়ে ওঠে এক নতুন সমাজ।
এই নববর্ষে হোক নতুন প্রত্যয়—পরিচ্ছন্নতা, সহনশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধকে সামনে রেখে চলার। হোক আত্মিক জাগরণ, আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ফিরে আসার একটি নতুন সুযোগ।