কামরুল ইসলাম, ঢাকা: বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে বহুল আলোচিত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লন্ডনে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আগামী শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে এই বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে অংশ নিতে আজ বুধবার লন্ডনে যাচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, চট্টগ্রামের প্রভাবশালী রাজনীতিক ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই বৈঠক শুধুই সৌজন্য নয়; বরং এটি হতে পারে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমঝোতা ও নির্বাচনকেন্দ্রিক রূপরেখা নির্ধারণের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘খসরু ভাই আজ (মঙ্গলবার) রাতেই বা আগামীকাল (বুধবার) সকালে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।’ আমীর খসরুর ঘনিষ্ঠ সহকারী মোহাম্মদ সেলিমও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রামের রাজনীতিকদের উত্থান:
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপির কৌশল নির্ধারণে চট্টগ্রামের দুই রাজনীতিক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ দলটির অভ্যন্তরে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন। তারা দুজনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সক্রিয়।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে থাকা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও চট্টগ্রামের সন্তান। ফলে একটি অদৃশ্য সমন্বয় তৈরি হয়েছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কৌশল ও অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের প্রেক্ষাপটে।
ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক: রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের সম্ভাবনা
বিএনপির মতে, ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক হতে পারে দেশের রাজনীতিতে একটি মোড় পরিবর্তনকারী মুহূর্ত। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকারের গঠন, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা এবং রাজনৈতিক সহনশীলতা নিশ্চিত করতে এই আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। অপরদিকে, তারেক রহমান যুক্তরাজ্য থেকে দল পরিচালনার পাশাপাশি বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
এই প্রেক্ষাপটে আমীর খসরুর উপস্থিতি দুই পক্ষের মধ্যে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কেবল একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নন, বরং অর্থনীতিতে অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য একজন কূটনীতিকও। তাঁর লন্ডনে উপস্থিতি এই বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে ‘বুদ্ধিবৃত্তিক উপস্থিতি’ নিশ্চিত করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আমীর খসরু মূলত দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য রাজনৈতিক রূপরেখা নিয়ে সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
লন্ডনে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠক শুধু একটি রাজনৈতিক সাক্ষাৎ নয়, বরং তা বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে বড় ধরনের ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশেষ করে বিএনপির অভ্যন্তরে চট্টগ্রামের রাজনীতিকদের নতুন করে কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসছে এই প্রক্রিয়া।
সম্ভাব্য প্রভাব ও পরিণতি:
- এই বৈঠকের পর বিএনপি হয়তো নতুন ভাষায় সংলাপের প্রস্তাব দিতে পারে।
- অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা জানিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের রূপরেখা দিতেও পারে।
- একান্ত গোপন বৈঠক হলেও বৈঠক-পরবর্তী বিবৃতি অথবা যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে জাতিকে নতুন বার্তা দেওয়া হতে পারে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক একটি তাৎক্ষণিক আলোচনার ফলাফল নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক বিন্যাসের অংশ। এই প্রক্রিয়ায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ভূমিকাও অনস্বীকার্য। বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে যদি এই বৈঠকের মাধ্যমে পারস্পরিক আস্থা গড়ে ওঠে, তবে তা দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের সমঝোতা ও নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত করতে পারে।