Home Second Lead ব্রিটেনের রাজার ক্ষমতা কত তা জানলে অবাক হতে হয়

ব্রিটেনের রাজার ক্ষমতা কত তা জানলে অবাক হতে হয়

চার্লস

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

৭৩ বছর বয়সে ব্রিটেনের রাজা হচ্ছেন প্রিন্স চার্লস। রাজার  মুকুট মাথায় ওঠার পর থেকেই একগুচ্ছ ক্ষমতা পাবেন। নিয়ম অনুযায়ী, যুবরাজ চার্লসই হবেন ইংল্যান্ড-সহ ১৫টি কমনওয়েলথ দেশের রাজা। ‘কুইন কনসর্ট’ হলেন তাঁর স্ত্রী ক্যামিলা।

৭৩ বছর বয়সি চার্লস ১৯৫২ সালে ইংল্যান্ডের যুবরাজ হন। তাঁর উপাধি ‘প্রিন্স অব ওয়ালেশ’ এখন পাবেন তাঁর বড় ছেলে উইলিয়াম। এতদিন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যা যা সুবিধা পেতেন, তার সবটাই পাবেন চার্লস । তাঁকে আর কর দিতে হবে না, লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাতে পারবেন, বিদেশভ্রমণে লাগবে না কোনও পাসপোর্ট।

King Charles III Becomes Oldest Person In UK History To Become Monarch -  Daily News Era

লাইসেন্স-পাসপোর্টের দরকারই নেই

ব্রিটেনে রানিই এমন একজন যাঁর গাড়ির কোনও লাইসেন্স দরকার নেই। জনসাধারণের জন্য লাইসেন্সের অনুমতি দেন রানিই। এবার রাজা চার্লসও সেই সুবিধা পাবেন। পুরো ব্রিটেনে তিনিই হবেন একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর গাড়ি চালাতে কোনও লাইসেন্স বা নম্বরপ্লেটের প্রয়োজন হবে না।

ব্রিটেনের রাজপরিবারের সবারই পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়, একমাত্র রানি ব্যতীত। এখন রানি নেই, তাই রাজাই এই সুবিধা পাবেন। পৃথিবীর যে কোনও দেশেই যান না কেন, কোনও পাসপোর্টই লাগবে না ব্রিটেনের রাজার।

কর দিতে হবে না

ব্রিটেনের কোনও আইনে রানি বা রাজার  কর দেওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু ১৯৯২ সাল থেকে রানি স্বেচ্ছায় আয়কর দিয়ে আসছেন। এবার রাজা কী করেন সেটাই দেখার।

King Charles III faces 'testing times' as new monarch | Deccan Herald

দু’দুটো জন্মদিনের সেলিব্রেশন

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথেরও ছিল। একটা আসল জন্মদিন, আর একটা নকল মানে সরকারি কাগজে-কলমে থাকা জন্মের দিন। রাজা চার্লসের আসল জন্মদিন শীতের শুরুতে মানে নভেম্বরের গোড়ায়। আর অন্যটা গরমের সময়ে। শোনা যাচ্ছে, দুটো জন্মদিনই নাকি বিশাল আড়ম্বর করে পালন করা হবে। ১৪০০ সেনা প্যারেড করবে, থাকবে ২০০টি ঘোড়া, আর ৪০০ জন মিউজিশিয়ান বাজনার তালে তালে রাজকীয় পরিবেশ তৈরি করবে। সে এক এলাহি ব্যাপার হবে।

 

ভোট দিতে হবে না রাজাকে

ব্রিটেনের রাজা বা রানিকে ভোট দেওয়ার দরকার নেই। পার্লামেন্টে যেতে পারেন ঠিকই তবে নির্বাচনে অংশ নেন না রাজপরিবারের কোনও সদস্যই। কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজা বা রানির সঙ্গে সপ্তাহান্তে বৈঠক সেরে নেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।

ব্রিটেনের সবগুলো ডলফিনের মালিক হবেন চার্লস
১৩২৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা দ্বিতীয় এডওয়ার্ডের রাজত্বকালে একটি বিধানে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের প্রধান দেশের সব স্টার্জন (একপ্রকার মাছ), তিমি এবং ডলফিনগুলোর মালিক। অদ্ভুত এই আইনটি এখনও বেশ ভালোভাবেই বহাল রয়েছে। যুক্তরাজ্যের সমুদ্রধারের তিন মাইলের মধ্যে যদি কোনও ডলফিন বা তিমি ধরা পড়ে, সেগুলোও তখন রাজা বা রানির মালিকানায় চলে আসে।

টেমস নদীর সবগুলো রাজহাঁসও রাজার অধীনে
রাজ পরিবার সূত্রে জানা যায়, ব্রিটেনের জলাশয়ের সব রাজহাঁসই প্রকৃতপক্ষে রানি বা রাজার মালিকানাধীন। তবে রানির এই ক্ষমতা শুধু টেমস ও তার শাখানদীগুলোর ক্ষেত্রেই রয়েছে।

প্রতি বছর ব্রিটেনে রাজহাঁসদের নিয়ে ‘সোয়ান আপিং’ নামে একটি রাজকীয় অনুষ্ঠান করা হয়। যেখানে টেমস নদীর সব রাজহাঁসকে ধরে তাদের রাজকীয় রাজহাঁস হিসেবে চিহ্নিত করে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।

চার্চেরও প্রধান হবেন রাজা
ষোড়শ দশকে রাজা সপ্তম হেনরি রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে ব্রিটেনকে পৃথক করে ফেলেন এবং ‘চার্চ অব ইংল্যান্ড’ হয় ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় ধর্ম। সেই চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রধান ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। শোনা যায়, তিনি চার্চের জন্য বিশপ এবং আর্চবিশপদের মনোনয়নও করতেন।  এবার সেই ক্ষমতা পাবেন রাজা চার্লস।

এই নিয়মটির অবশ্য খুব মজার একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। এই নিয়মের কারণে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের যেকোনো প্রধানকেই অবশ্যই চার্চ অব ইংল্যান্ডের অনুসারী হতে হয়। অন্য কোনো ধর্মের মানুষ ব্রিটেনের রানি বা রাজা হতে পারবেন না, এমনকি ক্যাথলিক হলেও না। যেমন প্রিন্স চার্লস এখন যদি ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়ে যান, রানি এলিজাবেথের উত্তরসূরী তিনি আর হতে পারবেন না।

কখনও অভিযুক্ত হবেন না, আদালতে সাক্ষীও দিতে হবে না

ব্রিটেনের আদালতের বিচারকার্য রানি বা রাজার নামেই সম্পন্ন করা হয়। তাই রানি বা রাজাকে অভিযুক্ত করা বা সাক্ষী দিতে বাধ্য করার ক্ষমতা কারও নেই। রাজ পরিবারের নাকি নিয়ম, রাজতন্ত্রের প্রধানের পক্ষে কোনও অপরাধ করাই সম্ভব নয়।

যে কোনও আইন পাস করতে হলে রাজার অনুমতি লাগবে

যে কোনও বিলকে পরিপূর্ণ আইনে পরিণত করতে অবশ্যই রানির সম্মতি থাকতে হয়। একটি প্রস্তাবিত আইন ব্রিটেনের দু’টি পার্লামেন্টেই পাস হওয়ার পর তার পরবর্তী গন্তব্য হয় রাজপ্রাসাদে। সেখানে অনুমোদন পেলেই তা আইন হিসেবে গৃহীত হয়। এর আনুষ্ঠানিক নাম ‘রয়্যাল অ্যাসেন্ট’ বা রাজকীয় সম্মতি।

এই ‘রয়্যাল অ্যাসেন্ট’ ছাড়াও রানি বা রাজার আরও একটি ক্ষমতা আছে, তা হল ‘কুইন্স কনসেন্ট।’ কোনও আইন যদি ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকে কোনওভাবে প্রভাবিত করে, তবে সেই আইন পার্লামেন্টে বিল হিসেবে তোলার আগেই রানির সম্মতি নিতে হয়। এখনও পর্যন্ত এই নিয়মটির প্রয়োগ হয়েছে ৩৯ বার। রানি এখন নেই, তাই এই নিয়মে কী বদল হবে সেটাই দেখার।