৪২” টেলিভিশন এর শুল্ক কত? কতটুকু স্বর্ণালংকার আনা যাবে? কত ডলার, কত ইউরো ঘোষণা ছাড়া আনা যাবে? কত প্রশ্ন! এ সকল প্রশ্নের অধিকাংশের উত্তর থাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যাত্রী ব্যাগেজ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে।
১. মদ/মদ জাতীয় পানীয় : বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী নাগরিকদের জন্য মদ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। বিদেশী পাসপোর্টধারী নাগরিক হলে ২ বোতল বা সর্বোচ্চ ১ লিটার পর্যন্ত আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (Detention memo) বুঝে নিবেন। আটককৃত মদ বিধি মোতাবেক বিক্রয়/ধ্বংসযোগ্য, তাই ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
২. সিগারেট : ১ কার্টন (২০০ শলাকা) পর্যন্ত সিগারেট শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (Detention Memo) বুঝে নিবেন। আটককৃত সিগারেট বিধি মোতাবেক বিক্রয়/ধ্বংসযোগ্য, তাই ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
৩. মোবাইল ফোন : ২ টি শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। ৩-৮টি পর্যন্ত শুল্ক-করাদি (প্রায় ৩৫%) পরিশোধ সাপেক্ষে আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (Detention Memo) বুঝে নিবেন। আটককৃত মোবাইল ফোন Adjudication প্রক্রিয়ায় BTRC দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।
৪. ল্যাপটপ : ১ টি শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। ২ টি পর্যন্ত শুল্ক-করাদি (প্রায় ২০%) পরিশোধ সাপেক্ষে আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (Detention Memo) বুঝে নিবেন। আটককৃত ল্যাপটপ পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায় আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।
৫. স্বর্ণ বার : ১ গ্রাম আনলেও শুল্ক-করাদি (প্রতি ১১.৬৭ গ্রাম এর জন্য ২০০০ টাকা) পরিশোধ করতে হবে। এভাবে ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (Detention Memo) বুঝে নিবেন। আটককৃত স্বর্ণ বার পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায় আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন। আর চোরাচালান বলে মনে হলে কাস্টমস সরাসরি ফৌজদারি মামলা করবে।
৬. স্বর্ণালংকার : ১০০ গ্রাম পর্যন্ত (এক প্রকারের অলংকার ১২ টির অধিক হবে না) শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে অতিরিক্ত প্রতি গ্রাম এর জন্য প্রায় ১,৫০০ টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। বাণিজ্যিক পরিমান বলে মনে হলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (detention memo) বুঝে নিবেন। আটককৃত স্বর্ণালংকার পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায় আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন। আর চোরাচালান বলে মনে হলে কাস্টমস সরাসরি ফৌজদারি মামলা করবে।
৭. টেলিভিশন : ২৯” পর্যন্ত শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। ৩০”-৩৬” হলে ১০,০০০ টাকা, ৩৭”-৪২” হলে ২০,০০০ টাকা, ৪৩”-৪৬” হলে ৩০,০০০ টাকা, ৪৭”-৫২” হলে ৫০,০০০ টাকা, ৫৩” -৬৫” হলে ৭০,০০০ টাকা এবং ৬৬” এর বেশি হলে ৯০,০০০ টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।
৮. নতুন শাড়ী/অন্যান্য কাপড়/কসমেটিক্স : ব্যাক্তিগত বিবেচনায় কয়েকটি পর্যন্ত শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। আরও কয়েকটি শুল্ক-করাদি (প্রায় ১৬০%) পরিশোধ সাপেক্ষে আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে বাণিজ্যিক বিবেচনায় কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (Detention memo) বুঝে নিবেন। আটককৃত পণ্য পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায় আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।
৯. ওষুধ : জরুরী বিবেচনায় প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে কিছুটা আনতে পারবেন। বাণিজ্যিক পরিমান বলে মনে হলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (Detention Memo) বুঝে নিবেন। আটককৃত ওষুধ পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদন্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।
১০. বৈদেশিক মুদ্রা : বিদেশে যাওয়ার সময় পাসপোর্টে এনডোরস [বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত ক্ষেত্র ব্যাতিত] ব্যাতিত কোন বৈদেশিক মুদ্রা সাথে নিতে পারবেন না। তবে বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫,০০০ টাকা পাসপোর্টে এনডোরস ছাড়াই সাথে নিতে পারবেন। সাধারণত প্রতি বার ভ্রমনে ৫,০০০ ডলার পর্যন্ত এনডোরস করিয়ে নেওয়া যায়। এনডোরস ব্যাতিত বৈদেশিক মুদ্রা সাথে নিলে কাস্টমস আটক করবে। আটক রশিদ (Detention Memo) বুঝে নিবেন। আর মুদ্রা পাচার বলে মনে হলে কাস্টমস সরাসরি ফৌজদারি মামলা করবে। বিদেশ থেকে ফেরার সময় ইচ্ছেমত বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারবেন। তবে ৫,০০০ ডলার/সমমান এর বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আনলে অবশ্যই কাস্টমস এর নিকট FMJ ফরম-এ ঘোষণা প্রদান করতে হবে।
🍀🍀 সাময়িক আটক : শুল্ক-করাদি পরিশোধ সাপেক্ষে খালাসযোগ্য পণ্যের ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক শুল্ক-করাদি পরিশোধ করার মত টাকা সাথে না থাকলেও ভয়ের কিছু নেই। সেক্ষেত্রে কাস্টমস তা সাময়িকভাবে আটক করবে। আটক রশিদ (Detention Memo) বুঝে নিবেন। সাময়িকভাবে আটককৃত পণ্য ২১ দিনের মধ্যে যথাযথ শুল্ক-করাদি পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন।
☘☘ এ-ফরম (তফসিল-১ ফরম) ঘোষণা : বিদেশ থেকে আসার আগে কার্গোতে ব্যাক্তিগত মালামাল বুকিং দিয়ে আসলে বাংলাদেশে নেমেই/৭ দিনের মধ্যে এয়ারপোর্ট কাস্টমস এর নিকট এয়ারওয়ে বিল এবং পাসপোর্টসহ উপস্থিত হয়ে নির্ধারিত “এ-ফরম” পূরণ করে মালামাল এর ঘোষণা প্রদান করবেন। অনুমোদিত “এ-ফরম” এর কপি নিয়ে মালামাল আসার পর শুল্ক-করাদি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) পরিশোধ সাপেক্ষে এয়ারফ্রেইট ইউনিট থেকে মালামাল নিতে পারেন।
☘☘ বাংলাদেশী কোন নাগরিক বিদেশে মৃত্যুবরণ করলে মৃত ব্যক্তির ব্যাগেজ সকল শুল্ক কর পরিশোধ ব্যতিরেকে খালাস করা যাবে।
☘☘ অসুস্থ, পঙ্গু ও বৃদ্ধ যাত্রীর হুইল চেয়ার ও ব্যবহার্য্য চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সকল শুল্ক কর পরিশোধ ব্যতিরেকে খালাস করা যাবে।
🚫🚫🚫অপরিচিত ব্যাক্তি এবং ব্যাগেজ-কে বিশ্বাস করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই না জেনে অন্য কারো দেওয়া মালামাল বহন করবেন না।