Home পরিবেশ খুলনা-মোংলা নদীপথে কুমির: নাবিক ও জেলেদের মাঝে আতঙ্ক

খুলনা-মোংলা নদীপথে কুমির: নাবিক ও জেলেদের মাঝে আতঙ্ক

ছবি: সোশ্যাল মাধ্যম

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, বাগেরহাট: খুলনার নদীপথে ফের দেখা দিয়েছে কুমিরের তৎপরতা। বিশেষ করে মোংলা বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত পশুর নদী ও এর আশপাশের সংযোগ খাল ও ক্যানালে বারবার কুমিরের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে করে এই নৌপথে যাতায়াতকারী যাত্রীবাহী ট্রলার, পণ্যবাহী কার্গো এবং মাছ ধরার ট্রলারগুলোর চালক ও যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

গত সপ্তাহে মোংলা বন্দরের কাছে একটি কার্গোর পেছনে সাঁতার কাটা একটি বিশালাকৃতির কুমিরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি নৌপরিবহন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নদী থেকে ফিরে আসা একাধিক জেলে জানান, তারা সম্প্রতি একাধিকবার কুমিরের মুখোমুখি হয়েছেন। কেউ কেউ মাছ ধরার ফাঁদ ছেঁড়া ও হঠাৎ পানিতে জলচাপ ধ্বনি শোনার কথাও বলেন, যা কুমিরের উপস্থিতিরই ইঙ্গিত।

পূর্বাপর ও ভৌগলিক প্রেক্ষাপট:

পশুর নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি নদী, যার মাধ্যমে খুলনা ও মোংলা বন্দরের মধ্যে নৌযোগাযোগ স্থাপিত। এই নদীপথটি সুন্দরবনের একেবারে গা ঘেঁষে বয়ে গেছে। সুন্দরবন হলো বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। এই বনে দীর্ঘদিন ধরে লবণাক্ত পানির কুমির বা মগর (Crocodylus porosus) বাস করে আসছে।

বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়, জোয়ার বা অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে কুমিরেরা তাদের আবাস ছেড়ে আশপাশের নদী ও খালে চলে আসে। পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের নদী ও বনাঞ্চলে অনুপ্রবেশ বেড়ে যাওয়ার কারণে এই বন্যপ্রাণীরা বিভ্রান্ত হয়ে মানববসতির কাছে চলে আসছে।

জননিরাপত্তা ও কর্তৃপক্ষের অবস্থান:

মোংলা বন্দরের নৌনিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব চালক ও মালিকদের সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছি। কুমির দেখা গেলে যেন সঙ্গে সঙ্গে বন্দরের কন্ট্রোল রুমে জানানো হয়।” বন বিভাগের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, তারা এ বিষয়ে নজর রাখছে এবং প্রয়োজনে কুমির উদ্ধার ও বনাঞ্চলে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভেবে অবহেলা করলে ভবিষ্যতে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষত মাছ ধরা বা ছোট নৌকায় চলাচল করা মানুষদের জন্য এই পরিস্থিতি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

নৌযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি:

স্থানীয় নৌচালক ইউনুস গাজী বলেন, “নদীতে মাছ ধরতে গেলে এখন ভয়ে থাকি। জাল ফেলে বসে থাকতে পারি না—যেকোনো সময় পেছন থেকে কুমির এসে টেনে নিতে পারে।” নদীপথে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রীদের অনেকেই এ পথে চলাচল কমিয়ে দিয়েছেন। অনেকে বিকল্প পথের খোঁজ করছেন।

সচেতন মহল মনে করছেন, বন বিভাগ, নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসন একযোগে কাজ করলে কুমিরের এই অস্বাভাবিক তৎপরতা মোকাবিলা সম্ভব।