বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
বেনাপোল: ওজন স্কেল নিয়ে বন্দর ও কাস্টমস-এর মধ্যে সৃ্ষ্ট জটিলতায় ভারত থেকে আমদানি করা বাণিজ্যিক পণ্য খালাস ব্যাহত হচ্ছে। শাড়ি, থ্রিপিস, সুটিং, শার্টিং কাপড়, ইমিটেশন, বিভিন্ন মোটর পার্টস, টু, থ্রি, ফোর হুইলার পার্টসের চালান আটকা পড়েছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, কমার্শিয়াল পণ্যের (শাড়ি, থ্রিপিস, সুটিং, শার্টিং কাপড়, ইমিটেশন, বিভিন্ন মোটর পার্টস, টু, থ্রি, ফোর হুইলার পার্টস, এসোটেট গুডস) চালানগুলো বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের পূর্বে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়েব্রিজ স্কেলে ট্রাকসহ পণ্যের গ্রস ওজন নির্ধারণ করা হয়। সেখানে কাস্টমসের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন। পণ্য আনলোড হওয়ার পরে আবার খালি ট্রাক ওজন করে পণ্যের নিট ওজন নিশ্চত করা হয়। কিন্তু অভিযোগ পাওয়া গেছে যে কয়েকটি চালান জালিয়াতি করে কম ওজন দেখিয়ে খালাস নেয়া হয়েছে বিপুল রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে। এর প্রেক্ষিতে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কাস্টমস ১১ টি চালানের ওজন স্লিপ বন্দর প্রশাসনের কাছে পাঠায়।
বন্দর থেকে এক পত্রে জানানো হয় যে ওয়েব্রিজে কাস্টম হাউসের প্রতিনিধি হিসেবে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ওজন কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়। ওজনের বিষয়ে ওয়েব্রিজ স্কেলে কর্মরত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার নিকট স্কেল সম্পর্কে মতামত গ্রহণপূর্বক পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রাণাধীন অন্যান্য স্থলবন্দরের ওয়েব্রিজসমূহের প্রতিটি পণ্যচালানের ওজন স্কেল কাস্টমস ও স্থলবন্দরের প্রতিনিধির যৌথ স্বাক্ষরে সম্পাদিত হয় এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের অটোমেশন কার্যক্রম ডাটা সফট কোম্পানি কর্তৃক সফটওয়্যারের আপগ্রেডেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এ ঘটনায় দুই পক্ষের রশি টানাটানিতে বেনাপোল কাস্টম হাউসে আইআরএম কর্তৃক পণ্য পরীক্ষন কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও রিপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে না। আর পরীক্ষন রিপোর্ট না হলে সে চালানের শুল্কায়ন সম্ভব নয়। যার কারণে বন্দর থেকে আমদানি করা কমার্শিয়াল পণগুল্যো খালাস করা যাচ্ছে না। এর ফলে আমদানিকারকরা তাদের পণ্য ছাড় করতে পারছেন না।
বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, ‘কাস্টমস ও বন্দরের মধ্যে ওয়েব্রিজের ওজন নিয়ে জটিলতার সৃস্টি হয়েছে। যার কারণে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। কমার্শিয়াল পণ্য আইআরএম পরীক্ষন গ্রুুপ কর্তৃক পরীক্ষন হলেও রিপোর্ট না হওয়ার কারণে আমদানি করা পণ্য বেনাপোল কাস্টসম হাউস থেকে শুল্কায়ন হচ্ছে না। আর শুল্কায়ন করতে পারছিনা বলে পণ্য বন্দর থেকে খালাস হচ্ছে না। এ সমস্য সমাধানের জন্য অ্যাসোসিয়েশন সদস্যরা কাস্টমস ও বন্দরের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক করলেও কোন সমাধান হচ্ছেনা। তবে স্কেলের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য বন্দর স্কেলে বন্দর অফিসার ও কাস্টমস অফিসারের উপস্থিতিতে ওয়েব্রিজের ওজন নিশ্চিতসহ স্লিপে উভয়ই স্বাক্ষর করলে সকল সমাস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বন্দর থেকে পণ্য খালাস না হওয়ায় শতাধিক কমার্শিয়াল পণ্য চালান বন্দরে আটকে আছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন দেশি আমদানিকারকরা।’
বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন জানান, আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন ভুমিকা রাখছেন না।’
বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বলেন, ওয়েব্রিজ স্কেলে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার স্বশরীরে উপস্থিতি নিশ্চিতপূর্বক ভারতীয় প্রত্যেকটি ট্রাকের ওজন স্কেলে স্লিপে স্বাক্ষর প্রদান করা হলে সঠিকতা যাচাই করা হয়ে যায়। কাস্টমস এই কাজটি না করে সব দায় আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘পণ্য পরীক্ষনের সময়তো কাস্টমস অফিসাররা ডিজিটাল স্কেলে ওজন করে ওজন নিশ্চিত করে থাকেন। আসলে সমস্য কোথায় হচ্ছে আমার জানা নেই। তাছাড়া বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রাধীন অন্যান্য স্থলবন্দরের ওয়েব্রিজসমূহের প্রতিটি পণ্যচালানের ওজন স্লিপে কাস্টমস ও স্থলবন্দরের প্রতিনিধির যৌথ স্বাক্ষরে সম্পাদিত হয়। শুধু বেনাপোলে ওজন স্লিপে কাস্টমস স্বাক্ষর করছেন না।’