Home Second Lead ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক হামলা চালাল ইরান, কিরিয়াত সদর দপ্তরে সরাসরি আঘাত

ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক হামলা চালাল ইরান, কিরিয়াত সদর দপ্তরে সরাসরি আঘাত

তেল আবিবের এক ভবন থেকে ধোঁয়া উড়ছে। ছবি সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি সামরিক হামলা। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩’ নামের এক অভিযানে ইসরায়েলের ভেতরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান, যার মধ্যে একটি সরাসরি আঘাত হেনেছে দেশটির সামরিক সদর দপ্তর ‘কিরিয়াত’-এ—যা যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেন্টাগন’-এর সমতুল্য।

শনিবার ভোররাতে এ হামলায় অন্তত দুইজন নিহত ও ২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। গুরুতর আহত এক নারী তেল আবিবের একটি হাসপাতালে মারা যান। মধ্য ইসরায়েলের অপর এক হামলায় আরও একজন নিহত হয়েছেন।

ফক্স নিউজ জানায়, ইরান থেকে একযোগে প্রায় ১৫০টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়া হয়। এর মধ্যে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানে। ফক্স নিউজের আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা ট্রে ইংস্ট বলেন, “তেল আবিবে কিরিয়াত কমপাউন্ডের একটি ভবন সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আঘাতের পর সেখানে ধ্বংসস্তূপ ছাড়া কিছু অবশিষ্ট নেই।”

ক্ষয়ক্ষতির বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, একাধিক ভবন বিধ্বস্ত হয়ে গেছে এবং ধোঁয়া ও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে। ইংস্ট জানান, “গোটা একটি ব্লক যেন মানচিত্র থেকে মুছে গেছে।”

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিং, অ্যারো ও প্যাট্রিয়ট—সক্রিয় থাকলেও একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র তা ভেদ করে গন্তব্যে পৌঁছেছে। এর ফলে ইসরায়েলি জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে পাল্টা হামলায় ইরানেও বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। ইরানের ইসফাহান, জানজান ও তেহরানে চালানো হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে পরমাণু বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তাও রয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩২০ জনের বেশি।

লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসফাহানে ছোড়া ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। তবে হামলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ভিডিওতে দেখা গেছে।

তেহরানের মেহরাবাদ বিমানবন্দরসহ হাকিমিয়েহ ও তেহরানপারস এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসনিম জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মেহরাবাদে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

এ পরিস্থিতিকে ঘিরে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেন, “ইসরায়েল যেন চরম শাস্তির জন্য প্রস্তুত থাকে।”

অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “আমাদের অপারেশন রাইজিং লায়ন যত দিন প্রয়োজন, তত দিন চলবে।” এ ঘোষণার মাধ্যমে ইসরায়েলের কঠোর জবাবের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

এই সংঘাতের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে জাতিসংঘে ইরানের মিশন জানিয়েছে, “ইসরায়েলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ওয়াশিংটন সম্পূর্ণ দায়ী থাকবে। প্রয়োজনে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে পাল্টা হামলা চালানো হবে।”

ইরানের রাজধানী তেহরানে একের পর এক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইরান ইন্টারন্যাশনালের লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, তেহরান ও ইসফাহানে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলি প্রজেক্টাইল ভূপাতিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার বরাতে সিএনএনের লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরানের বিভিন্ন অংশে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, শহরের দুইটি স্থান থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ছে। তবে এসব বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

 

তেহরানে একের পর এক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ছবি সংগৃহীত

এ ছাড়া তেহরানের মেহরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগুন জ্বলছে বলে ইরানের দুইটি সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে। সংবাদসংস্থা তাসনিম বলছে, বিমানবন্দর এলাকা থেকে ধোঁয়া উড়ছে।