Home আন্তর্জাতিক সূর্যের দক্ষিণ মেরুর প্রথম ছবি প্রকাশ: সূর্য বিজ্ঞান গবেষণায় নতুন যুগের সূচনা

সূর্যের দক্ষিণ মেরুর প্রথম ছবি প্রকাশ: সূর্য বিজ্ঞান গবেষণায় নতুন যুগের সূচনা

সংগৃহীত ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মানুষ প্রথমবারের মতো সূর্যের দক্ষিণ মেরুর ছবি দেখতে পেয়েছে। এই ঐতিহাসিক চিত্র পাঠিয়েছে ব্রিটেনে নির্মিত মহাকাশযান ‘সোলার অরবিটার’। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইসা) এবং নাসার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই প্রকল্প সূর্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বিস্তারে এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।

এতদিন ধরে পৃথিবী ও অন্যান্য উপগ্রহগুলো সূর্যের বিষুবরেখার সমান্তরালে ঘুরে বেড়াত, ফলে তার মেরুর দৃশ্য দেখা ছিল অসম্ভব। কিন্তু এবার ‘সোলার অরবিটার’ ১৭ ডিগ্রি নিচু কক্ষপথে প্রবেশ করে সূর্যের দক্ষিণ মেরুর স্পষ্ট দৃশ্য পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।

ইসার বিজ্ঞান পরিচালক ক্যারোল মাণ্ডেল বলেন, “আজ আমরা প্রথমবারের মতো সূর্যের মেরুর চিত্র দেখতে পাচ্ছি। সূর্য আমাদের নিকটতম তারা জীবনের উৎস এবং প্রযুক্তি বিপর্যয়ের সম্ভাব্য উৎসও। তাই এর আচরণ ও প্রকৃতি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে উৎক্ষেপণের পর দুই বছর সময় লেগেছে মহাকাশযানটির সূর্যের কক্ষপথে পৌঁছাতে। ব্রিটেনের হার্টফোর্ডশায়ারে অবস্থিত স্টিভেনেজে নির্মিত এই মহাকাশযানটি সূর্যের চুম্বকীয় ক্ষেত্র, সৌর ঝড় এবং সৌর বায়ুর কার্যকারণ বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। এই তথ্য আগামী দিনে বিপজ্জনক সৌর বিস্ফোরণ শনাক্ত করতে সহায়ক হবে, যাতে বিমান বা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

বিজ্ঞানীরা জানান, অতীতে কয়েকবার শক্তিশালী সৌর ঝড় পৃথিবীতে বড় বিপর্যয় ঘটিয়েছে। যেমন ১৯৮৯ সালে কানাডায় একটি জিওম্যাগনেটিক ঝড়ে ছয় মিলিয়ন মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় পড়েছিল।

সোলার অরবিটারের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, বর্তমানে সূর্যের দক্ষিণ মেরুতে চুম্বকীয় ক্ষেত্র অগোছালো এবং বিপরীত মেরুর চুম্বক একসাথে অবস্থান করছে, যা সাধারণ চৌম্বকের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে এই চৌম্বকীয় কর্মকাণ্ড আরও স্পষ্ট ও শৃঙ্খলিত হবে।

ইসার বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল মুলার বলেন, “এই পর্যবেক্ষণ কেবল সূচনা। আগামী বছরগুলোতে মহাকাশযানটি আরও উচ্চ কক্ষপথে যাবে, ফলে সূর্যের মেরু অঞ্চলের আরও স্পষ্ট দৃশ্য পাওয়া যাবে।”

জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সামি সোলাঙ্কি বলেন, “সূর্যের মেরুগুলো একেবারেই অজানা অঞ্চল। আমরা জানি না সেখানে কী ঘটছে। এই গবেষণা আমাদের একটি অনন্য ও মূল্যবান দৃষ্টিকোণ দিয়েছে।”

এই আবিষ্কার সূর্য নিয়ে দীর্ঘদিনের ধোঁয়াশা দূর করে ভবিষ্যতের মহাকাশ আবহাওয়া পূর্বাভাসকে আরও নির্ভরযোগ্য করে তুলবে।

সংগৃহীত ছবি


সূর্যের এমন বৈজ্ঞানিক বিস্ময় ও নতুন আবিষ্কারের হালনাগাদ জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। শেয়ার করুন এই প্রতিবেদন, ছড়িয়ে দিন জ্ঞানের আলো।