বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বাস চলাচল টানা দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে নতুন মিনিবাস সার্ভিস ঘিরে শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের দ্বন্দ্বে এ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আর এর চরম খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা বাসস্ট্যান্ডে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না কেউ, আবার কেউ বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে বিকল্প উপায়ে রওনা হয়েছেন।
মৌলভীবাজার সদর বাসস্ট্যান্ডে বুধবার দুপুরে দেখা যায়, একাধিক নারী, শিশু ও বৃদ্ধ দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও কোনো বাস পাননি। সবার মুখেই বিরক্তি ও হতাশা।
জুড়ি উপজেলার বাসিন্দা নাজমা বেগম সকালে হবিগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে মৌলভীবাজার শহরে আসেন। তিনি বলেন,
‘সকালে নাতনির চিকিৎসা নিয়ে যেতে হবিগঞ্জ আসছিলাম। স্ট্যান্ডে এসে দেখি, বাসই নাই। কেউ আগে থেকে জানায়ও নাই যে বাস বন্ধ।’
এদিকে হবিগঞ্জ শহরের কোর্ট রোড বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায় একাধিক যাত্রী পাঁজিপড়া মালপত্র হাতে দিশেহারা হয়ে ঘুরছেন।
শায়েস্তাগঞ্জগামী যাত্রী নুরুল আমিন বলেন, ‘জরুরি কাজে মৌলভীবাজার যেতে হবে। সকাল থেকে তিন ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি, একটা গাড়িও চলছে না। অটোরিকশায় গেলে এক হাজার টাকা লাগবে—এত খরচ করব কীভাবে?’
বিশ্বনাথ থেকে আসা কলেজছাত্র মো. রায়হান বলেন, ‘আমার মৌলভীবাজারে পরীক্ষা ছিল আজ দুপুরে। এখন বুঝতেছি, পৌঁছানো আর হইবে না। বাস মালিক আর শ্রমিকদের সমস্যা হইলেও যাত্রীদের কেন কষ্ট ভোগ করতে হবে?’
এই অচলাবস্থা তৈরির মূল কারণ হিসেবে দুই জেলার বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে রুট নিয়ন্ত্রণ ও নতুন মিনিবাস সার্ভিস চালুর অনুমোদন সংক্রান্ত বিরোধ উঠে এসেছে।
হবিগঞ্জ বাস মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘মৌলভীবাজারের শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা নতুন মিনিবাস চালু করেছেন নিয়ম না মেনে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। তারা আমাদের বাসকেও চলতে দিচ্ছে না।’
অন্যদিকে মৌলভীবাজার শ্রমিক ইউনিয়নের বাস লাইন সভাপতি কুতুব মিয়ার ভাষ্য, ‘আমরা যাত্রীসেবা বাড়াতে নতুন বাস চালু করেছি। হবিগঞ্জ পক্ষ থেকে অহেতুক বাধা দিচ্ছে। আমাদের এলাকায় তারা ঢুকতে না পারার অভিযোগ তুলে নিজেরাই বাস বন্ধ রেখেছে।’
এই দ্বন্দ্বে যাত্রীদের দুর্ভোগ কতটুকু হচ্ছে, সেটি কোনো পক্ষই গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেই অভিযোগ করছেন স্থানীয় নাগরিকরা।