শিপিং ডেস্ক:
সিঙ্গাপুর পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজ এমভি ওয়ান হাই ৫০৩-এ সোমবার বিকেলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর টানা তৃতীয় দিনেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। কোচি উপকূলে ভেসে থাকা এই জাহাজ থেকে জ্বলছে আগুন এবং ধোঁয়ার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী বিষাক্ত বাষ্প।
ভারতের মহাকাশচারী ও কোস্ট গার্ডের একাধিক জাহাজ আগুন নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটিয়ে গেলেও তীব্র তাপ, বিপজ্জনক রাসায়নিক এবং বিস্ফোরকের কারণে কাজটি হয়ে উঠছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জাহাজটিতে থাকা ১৫৭টি বিপজ্জনক পণ্যে পূর্ণ কনটেইনারের তালিকা প্রকাশ করেছে ডিরেক্টর জেনারেল অফ শিপিং। তবে বিস্ফোরকের বিস্তারিত তথ্য সেখানে নেই। উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিস্ফোরক থেকেই প্রাথমিক বিস্ফোরণটি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাহাজটিতে থাকা ১৮ জন ক্রুর মধ্যে ৫ জন আগুনে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকিদের স্থানীয় এক হোটেলে রাখা হয়েছে। তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু করেছে তদন্তকারী দল। এদিকে, সিঙ্গাপুর মেরিটাইম কর্তৃপক্ষের নিয়োগপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা বুধবার কোচিতে পৌঁছেছেন।
জাহাজটির ভিতরে এখনো জ্বলছে আগুন। আশপাশেই রয়েছে প্রায় ২০০০ টন ভারী জ্বালানি ও ২৪০ টন ডিজেল। এতে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। কোস্ট গার্ডের বিমান পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, জাহাজ থেকে ১০ থেকে ১৫টি কনটেইনার সাগরে ভেসে পড়েছে, যেগুলো প্রবল স্রোতে দক্ষিণ-পূর্বমুখে ভেসে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব কনটেইনার বৃহস্পতিবারের মধ্যে কেরালার এরনাকুলাম থেকে ত্রিভান্দ্রম উপকূল পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে।
এরই মধ্যে জাহাজ মালিকপক্ষ উদ্ধার কাজে ‘টি অ্যান্ড টি সালভেজ’ নামক সংস্থাকে নিয়োগ দিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন দমকল বিশেষজ্ঞ এখনও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি। যুক্তরাজ্য বা নেদারল্যান্ডস থেকে বিশেষজ্ঞ আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর আইএনএস সুতলেজ এবং কোস্ট গার্ডের সমুদ্র প্রচারী, সমরথ, অবিনব ও অর্ণবেশ আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে। বায়বীয় বিস্ফোরণ রোধে ‘বাউন্ডারি কুলিং’ শুরু করার পরামর্শ দিয়েছে সিঙ্গাপুর মেরিটাইম কর্তৃপক্ষ।
জাহাজটি বর্তমানে এক নটিক্যাল মাইল গতিতে দক্ষিণমুখে ভেসে যাচ্ছে। যেহেতু সেটি এখনো আগুন ও বিষাক্ত পণ্যে পূর্ণ এবং টাগ বোট দিয়ে টানার মতো পরিস্থিতি নয়, তাই বিকল্প উপায়ে নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
ডিরেক্টর জেনারেল অফ শিপিং জানিয়েছে, বিপজ্জনক মালামালসহ কনটেইনারে রয়েছে দাহ্য তরল, কঠিন পদার্থ, স্বয়ংক্রিয় দাহ্য বস্তু এবং বিষাক্ত ও ক্ষয়কারী রাসায়নিক। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ঝুঁকিপূর্ণ মালামালের পূর্ণ তালিকা এখনও আসেনি।
এমভি ওয়ান হাই ৫০৩ এখনো জলে ভাসছে, তবে ভেতরে পানি প্রবেশ বা কাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। আপাতত সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হচ্ছে, জাহাজটি যেন ভারতের উপকূলের দিকে না এগোয় এবং আগুন যাতে আর ছড়িয়ে না পড়ে।