Home আন্তর্জাতিক ক্ষুধা কোনো স্বল্পতার ফল নয়, এটি নৈতিক ব্যর্থতা: প্রধান উপদেষ্টা

ক্ষুধা কোনো স্বল্পতার ফল নয়, এটি নৈতিক ব্যর্থতা: প্রধান উপদেষ্টা

রোমে বিশ্ব খাদ্য ফোরামে ড. ইউনূস
বিশ্ব খাদ্য ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “গ্রামীণ ব্যাংক প্রমাণ করেছে, দরিদ্র নারীরাও হতে পারে সফল উদ্যোক্তা।” তিনি আরও বলেন, “গ্রামীণ দানোন শিশুখাদ্য অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়ছে, আর পৃথিবীর নানা প্রান্তে গড়ে ওঠা অসংখ্য সামাজিক ব্যবসা মানুষ ও সমাজকে ক্ষমতায়ন করছে।”

সোমবার (১৩ অক্টোবর) ইতালির রোমে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস বলেন, এখন সময় এসেছে তরুণ, নারী, কৃষক, কৃষিভিত্তিক উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গড়ে তোলার। এজন্য উপযুক্ত আইনি ও আর্থিক কাঠামো তৈরি করতে হবে, যাতে তারা বাধাগ্রস্ত না হয়ে এগিয়ে যেতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলাদেশের তরুণদের নেতৃত্বে জনগণের অংশগ্রহণে এক ঐতিহাসিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। বর্তমানে সেই তরুণরাই দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ন্যায় ও জনগণের ক্ষমতার প্রতি অঙ্গীকারের প্রতীক হিসেবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের আয়তন ইতালির অর্ধেক হলেও আমরা ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য যোগান দিচ্ছি। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।”
তিনি জানান, বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য চালে দেশটি এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধান, শাকসবজি ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদনকারী দেশ। কৃষকরা জমির ফসল ফলানোর হার ২১৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন, ১৩৩টি জলবায়ু-সহনশীল ধানজাত উদ্ভাবন করা হয়েছে, এবং কৃষিতে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়ে যান্ত্রিকীকরণ ও শক্তিশালী খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।

ক্ষুধার কারণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, “ক্ষুধা কোনো স্বল্পতার ফল নয়; এটি মানুষের তৈরি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও নৈতিক ব্যর্থতার ফল।”
তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালে বিশ্বে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, অথচ পৃথিবী পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করছে। “এটি উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়—এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা। এটি এক নৈতিক ব্যর্থতা। যখন ক্ষুধা দূর করতে আমরা কয়েক বিলিয়ন ডলার জোগাড় করতে পারিনি, তখন পৃথিবী ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার অস্ত্র কেনায় ব্যয় করেছে। এটাই কি আমাদের অগ্রগতির সংজ্ঞা?” —প্রশ্ন তোলেন তিনি।