বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:
ট্যাটু এখন বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয় এক শিল্পকলা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর কদর বাড়ছে প্রতিনিয়ত। শরীরের বিভিন্ন অংশে নকশা আঁকিয়ে নিজেকে প্রকাশ করার এই মাধ্যম একসময় সীমাবদ্ধ ছিল পাঙ্ক সংস্কৃতি বা বিশেষ শ্রেণির মধ্যে, কিন্তু আজ তা মূলধারার একটি ফ্যাশন স্টেটমেন্টে পরিণত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এই চিত্রাঙ্কন শরীরের জন্য শুধু শিল্প নয়, হতে পারে এক উদ্বেগজনক স্বাস্থ্যঝুঁকিও।
সম্প্রতি সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় জানা গেছে, ট্যাটু করানো ব্যক্তিদের মধ্যে লিম্ফোমা নামক এক ধরনের রক্তের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় প্রায় ২১ শতাংশ। গবেষকরা ১১ হাজার ৯০০ জন অংশগ্রহণকারীর উপর এই বিশ্লেষণ চালান। দেখা যায়, শরীরের ট্যাটু ইঙ্ক বা রঙ ত্বকের মধ্য দিয়ে লিম্ফ নোড বা লসিকা গ্রন্থিতে জমে যেতে পারে, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এই গবেষণাটি এমন একটি সময়ে এসেছে, যখন বিশ্বব্যাপী ট্যাটু শিল্পের বিস্তার ও গ্রহণযোগ্যতা বেড়েই চলেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শরীরে একটি বড় ট্যাটু (হাতের তালুর চেয়েও বড়) করিয়েছেন, তাদের মধ্যে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা ২.৪ গুণ এবং লিম্ফোমার আশঙ্কা ২.৮ গুণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ, যত বড় এলাকা জুড়ে ট্যাটু, তত বেশি ঝুঁকি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্যাটুতে ব্যবহৃত ইঙ্ক বা রঙে থাকা উপাদান যেমন কার্বন ব্ল্যাক, পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনস , ভারী ধাতু এবং কিছু রঞ্জকদ্রব্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে লাল রঙের ইঙ্কে থাকা পারদজাত যৌগ ত্বকে অ্যালার্জি বা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী চুলকানি, গাঁট বা ঘা তৈরি হয়, যা ক্যান্সারের পূর্বাভাস হতে পারে।
তবে গবেষকরা এ-ও বলছেন, এখনো পর্যন্ত এই সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত নয়। কারণ ক্যান্সার একটি বহুস্তরীয় ও জটিল রোগ, যার জন্য একাধিক কারণ দায়ী হতে পারে। তবু সাবধানতা অবলম্বন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
কী করবেন?
ট্যাটু করানোর আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:
পরিচ্ছন্ন ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত ট্যাটু স্টুডিও থেকে ট্যাটু করান
ব্যবহৃত ইঙ্কের উপাদান সম্পর্কে খোঁজ নিন
ট্যাটু করানোর পর ত্বকে অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বা ঘা দেখা দিলে দেরি না করে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো ট্যাটুকে ক্যান্সারের নিশ্চিত কারণ হিসেবে চিহ্নিত না করলেও গবেষণাগুলোর প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো বৃহৎ পরিসরে গবেষণা করা হলে হয়তো এ বিষয়ে আরো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।
ট্যাটু নিঃসন্দেহে একটি শিল্প, একটি আত্মপ্রকাশের মাধ্যম। তবে শরীরে যা প্রবেশ করে তা নিছক রঙ নয়, হতে পারে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থও। সুতরাং সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রয়োজন সচেতনতা, সতর্কতা ও যথাযথ জ্ঞান।
🔍 আপনার শরীরে ট্যাটু আছে? কিংবা করানোর কথা ভাবছেন? নিজের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকুন। ট্যাটু রঙের উপাদান, নিরাপদ স্টুডিও এবং পেশাদার ট্যাটু শিল্পী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তবেই সিদ্ধান্ত নিন।
📣 চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন যদি ট্যাটু করা অংশে অস্বাভাবিক প্রদাহ, চুলকানি বা ঘা দেখা দেয়।
📩 আরও স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদন ও আপডেট পেতে বিজনেসটুডে২৪.কম-এ চোখ রাখুন।
✅ শেয়ার করুন প্রতিবেদনটি, যাতে আপনার বন্ধু বা পরিবারের সদস্যরাও ট্যাটু-সম্পর্কিত এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারেন।