Home স্বাস্থ্য অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন ভুটানের মায়েরা

অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন ভুটানের মায়েরা

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: দেখতে সবার মতো হলেও, অনেকের প্রতিদিনের জীবন হয় অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রামের নাম। অটিজম, মনঃস্বাস্থ্য সমস্যা, এডিএইচডি বা সংবেদনশীলতার অসুবিধা ইত্যাদি  বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতা সাধারণত বাইরের চোখে ধরা পড়ে না। কিন্তু সমাজের অজ্ঞতা, বিরূপ মনোভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণে এসব মানুষ ও তাদের পরিবার প্রায়ই হয়রানির শিকার হন। এখন ভুটানের অনেক অভিভাবক ও সংগঠন স্বেচ্ছাপ্রসূত পরিচয়পত্র ব্যবস্থা চালুর আহ্বান জানাচ্ছেন, যেন সচেতনতা বাড়ে ও সহানুভূতির সঙ্গে আচরণ নিশ্চিত হয়।

১৪ বছর বয়সী নিমার মা ওয়াংমো জানান, তাঁর ছেলে অটিজম ও ADHD-তে আক্রান্ত হলেও সাধারণ শিশুদের মতোই চটপটে ও বুদ্ধিদীপ্ত। তবুও জনসমক্ষে যখন সে আচরণগত ভিন্নতা দেখায়, অনেকেই তা ‘অভিভাবকত্বের ব্যর্থতা’ বলে ভুল ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন, “আমার ছেলে শারীরিকভাবে সুস্থ, তাই মানুষ সহজেই বুঝতে পারে না যে তার একটি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। একা থাকলে কেউ তাকে আঘাতও করতে পারে ভুল বুঝে।” তাঁর মতে, একটি ছোট্ট আইডি কার্ড এই সমস্যার বড় সমাধান হতে পারে। “আমি চাই না আমার ছেলের জন্য কেউ করুণা করুক, শুধু চাই যেন সবাই বুঝতে পারে ওর আচরণটা ভিন্ন, কারণ সে বিশেষ অবস্থায় আছে।”

তবে সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনগুলো বলছে, জোর করে এমন পরিচয়পত্র চাপিয়ে দিলে তা বরং কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাদের মতে, এটি হতে হবে একেবারেই স্বেচ্ছামূলক।

বিশ্বব্যাপী এই বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। যেমন, যুক্তরাজ্যে চালু হওয়া ‘হিডেন ডিজঅ্যাবিলিটি সানফ্লাওয়ার’ নামের একটি স্বীকৃত প্রতীক এখন বহু দেশে গৃহীত।

ভুটানের ড্রাকতসো ট্রেনিং সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ডেকি জাম বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র বহন করে যাতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা সহজে পায়। এখনো অনেক অভিভাবক শিশুদের জনসম্মুখে আনেন না শুধুমাত্র সমাজের নেতিবাচক মনোভাবের ভয়ে।”

আবিলিটি ভুটান সোসাইটির সমাজকর্মী সুমিত্রা দার্জি বলেন, “এই পরিচয় ব্যবস্থাটি স্বেচ্ছামূলক হওয়া উচিত, যাতে কেউ জোরপূর্বক বাধ্য না হয়। একইসঙ্গে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যেন এই সুবিধা কেবল প্রকৃতপ্রস্তাবে প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই পান।”

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এক অটিস্টিক ও বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরকে গুলি করে পুলিশ, কারণ তারা তার অবস্থাটি জানত না। এই ধরনের ঘটনা থেকেই ওয়াংমোর মতো অভিভাবকরা আরও ভয় পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “আমরা করুণা চাই না। চাই শুধু বোঝাপড়া, সহানুভূতি এবং একটু সহায়তা—যাতে আমাদের সন্তানদের জীবনটা একটু সহজ হয়।”