বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:
বিশ্বে বহু জাতের মুরগি রয়েছে, কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার এক বিশেষ জাতের মুরগি রয়েছে যাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় ও দামী মুরগি। এই মুরগিকে বলা হয় ‘আয়াম চেমানি’। অনেকে একে বলেন ‘ল্যাম্বোরগিনি চিকেন’, কারণ এর বাহ্যিক গঠন যেমন অসাধারণ, তেমনই এর দাম আকাশচুম্বী।
এই মুরগির মূল আকর্ষণ এর পূর্ণ কালোতা। এর পালক শুধু নয়, এর চামড়া, ঠোঁট, জিহ্বা, চোখ, নখ, হাড় এবং এমনকি মাংস পর্যন্ত কালো। একমাত্র এর রক্ত পুরোপুরি কালো নয়, তবে তা এতটাই গাঢ় লাল যে অনেকেই একে কালো বলে ভুল করেন। এই বৈশিষ্ট্য একে করে তুলেছে বিশ্বের অন্যতম বিরলতম ও ব্যতিক্রমী প্রাণী।
কোথা থেকে এসেছে এই মুরগির রহস্য?
আয়াম চেমানি প্রজাতির উৎপত্তি ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে। “আয়াম” শব্দের অর্থ ইন্দোনেশীয় ভাষায় মুরগি আর “চেমানি” মানে পুরো কালো। স্থানীয় লোকজন শত শত বছর ধরে বিশ্বাস করে, এই মুরগি আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, এটি ভাগ্য আনয়ন করে, আবার অনেকে এটিকে আত্মা তুষ্ট করার প্রতীক হিসেবে পূজা করে।
কালো কেন এর সবকিছু?
এই মুরগির শরীরে একটি জিনগত মিউটেশন রয়েছে, যাকে বলা হয় ফাইব্রোমেলানোসিস। এই জিন শরীরে অতিরিক্ত মেলানিন তৈরি করে, যার ফলে মুরগিটির শরীরের প্রতিটি অংশই হয়ে যায় কালো। মানুষের অ্যালবিনিজম যেভাবে ত্বক সাদা করে দেয়, এ ক্ষেত্রে ঠিক তার বিপরীত প্রক্রিয়ায় চলে।
ডিম ও মাংসের দাম আকাশচুম্বী
এই প্রজাতির একটি ডিমের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ২০০০ থেকে ২৫০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। যদিও স্থানীয়ভাবে দাম কিছুটা কম, তবে এই ডিম খুবই বিরল এবং সারা বছর ডিম পাওয়া যায় না।
আয়াম চেমানির একটি পূর্ণবয়স্ক মুরগির দাম ২০০০ থেকে ৫০০০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। বিশ্বের ধনী মানুষদের কেউ কেউ একে পোষ্য প্রাণী হিসেবে রাখেন, কেউ আবার বিশেষ আয়ুর্বেদিক খাদ্য হিসেবে এর মাংস খেয়ে থাকেন।
স্বাদেও ব্যতিক্রম
যদিও অনেকের মতে এর স্বাদ সাধারণ মুরগির মতোই, তবে যারা খেয়েছেন তারা বলেন, এর মাংসে বিশেষ ধরনের ঘনতা, কোমলতা ও গাঢ় সুগন্ধ রয়েছে। অনেকে বিশ্বাস করেন, এর মাংস উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর ব্যবহার
আয়াম চেমানি মূলত ইন্দোনেশিয়াতেই চাষ হয়, তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে আমেরিকা, ইউরোপ ও জাপানে, এটি এখন কালেক্টরস আইটেম। কেউ কেউ একে অভিজাত পোল্ট্রি খামারে চাষ করে, তবে এর প্রজনন হার কম হওয়ায় ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে কি এই মুরগি আছে?
বাংলাদেশে কিছু উদ্যোক্তা ও খামারিরা শখের বসে এই জাতের মুরগি এনেছেন। তবে এখনো তা বাণিজ্যিকভাবে বিস্তার লাভ করেনি। মূলত, এই মুরগির অতিরিক্ত যত্ন ও বিশেষ পরিবেশের প্রয়োজন হয়, যা সাধারণ খামারে নিশ্চিত করা কঠিন। তবুও, দেশে একে দামী পাখির বাজারে একটি প্রতীকী নাম হিসেবে ধরা হয়।
উপসংহার
আয়াম চেমানি কেবল একটি মুরগি নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক, জৈবিক ও আর্থিক বিস্ময়। অন্ধকারে মোড়ানো এই মুরগি যেমন চমক সৃষ্টি করে, তেমনই এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতি কতটা বিচিত্র হতে পারে।
আপনিও কি এমন রহস্যময় প্রাণীর গল্প জানতে আগ্রহী?
🌐 প্রতিদিন ভিজিট করুন: বিজনেসটুডে২৪.কম
📢 পছন্দ হলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন
💬 আপনার মতামত জানান মন্তব্যে
📌 আরও চমকপ্রদ ফিচারের জন্য চোখ রাখুন আমাদের পাতায়