এভিয়েশন ডেস্ক:
আহমেদাবাদের আকাশে উঠে মাত্র তিরিশ সেকেন্ড পেরিয়েছিল। এরই মাঝে ভয়াল শব্দে কেঁপে উঠল আকাশযানটি। মুহূর্তেই যেন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়ল। আগুনে ছারখার হয়ে গেল বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারটি। ২৪২ জন যাত্রী-ক্রুদের কেউই বেঁচে নেই শুধু একজন ছাড়া। তিনি ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাস কুমার রমেশ।
সাদা জামা রক্তে রাঙা, পায়ে জুতো নেই, মুখমণ্ডলে ছাই আর রক্তের ছাপ। হাতে এখনো ধরা বোর্ডিং পাস। আহমেদাবাদের শাহিবাগের অলিগলিতে অসহায়ভাবে হেঁটে যাচ্ছিলেন ৪০ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ ব্যবসায়ী। কে বলবে, তিনি এখনো বেঁচে আছেন? চারপাশে শুধু ছিন্নভিন্ন দেহাবশেষ কিন্তু তিনিই অলৌকিকভাবে উঠে দাঁড়িয়েছেন ধ্বংসস্তূপের মাঝখান থেকে।
“যখন উঠে দাঁড়ালাম, চারপাশে শুধু মরদেহ। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। দৌড়াতে শুরু করলাম। কেউ একজন আমাকে ধরে অ্যাম্বুলেন্সে তোলে,” হাসপাতালের বেডে শুয়ে বলতে থাকেন তিনি। মুখ ফুলে গেছে, কপালে গভীর ক্ষত, পা দুটো কেটে গেছে ধ্বংসস্তূপের ওপর হাঁটার কারণে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শরীরজুড়ে আঘাত আর দগ্ধ চিহ্ন।
তিনি ছিলেন ১১এ নম্বর আসনে। যাত্রার সময় ভাই অজয় কুমার রমেশ ছিলেন প্লেনের অন্য একটি সিটে। আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই দুর্ঘটনা ঘটে। সামনের অংশ ছিঁড়ে গিয়ে একটি ভবনের সঙ্গে আটকে পড়ে সেই সামনের অংশেই ছিলেন বিশ্বাস। প্লেনের বাকিটা আগুনে পুড়ে ছাই।
দুই ভাই মিলে গুজরাটের দেও এলাকায় আত্মীয়দের সঙ্গে কিছুদিন কাটিয়ে লন্ডনে ফিরছিলেন। ভাই এখনো নিখোঁজ। হাসপাতালের বেডে শুয়ে ভাইয়ের খোঁজেই ব্যাকুল হয়ে ওঠেন বিশ্বাস, বারবার বলেন, “আমরা একসঙ্গে ফিরব ঠিক করেছিলাম। ভাইটা কোথায়?”
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত স্বজনরাও চমকে ওঠেন। ভিডিও কলে রক্তাক্ত মুখে আত্মীয়দের বলেন, “আমার জন্য চিন্তা কোরো না, ভাইয়ের কী হলো বলো!”
চিকিৎসকদের ধারণা, ভাগ্যই যেন বাঁচিয়ে দিয়েছে এই মানুষটিকে। সবার চোখে বিস্ময়—ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে কীভাবে এই মানুষটি একা বেরিয়ে এলেন?
এদিকে ওই দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন বহু চিকিৎসা শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনার সময় প্লেনটি একটি মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ডাইনিং হলে ঢুকে পড়ে। একজন শিক্ষার্থীর মা জানান, তার ছেলে লাঞ্চ ব্রেকে ছিল—লাফ দিয়ে বেঁচেছে।
মৃত্যুর স্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে যিনি বেঁচে ফিরেছেন, তিনি আজ নিঃসন্দেহে আশার প্রতীক। তবু তার শুধু একটাই প্রশ্ন ভাইটা কোথায়?