বুধবার রাত থেকেই গুয়াহাটির রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন প্রায় দশ হাজার মানুষ। হাত কেটে পোস্টার লিখে স্লোগান তুলেছেন ছাত্রছাত্রীরা। রাজধানী দিসপুরের সচিবালয়ের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ফেলেন প্রতিবাদীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বঙ্গাইগাঁও ও ডিব্রুগড়ে দু’কলাম সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তা ছাড়া এ ছাড়া জোরহাট ও তিনসুকিয়ায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। গুয়াহাটি এবং ডিব্রুগড়ে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। যে কোনও ধরনের জমায়েত, মিটিং, মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অসমের তিনসুকিয়া, কামরূপ, গোলাঘাট, দিসপুর, ধেমাজি, শিবসাগর, জোরহাট-সহ একাধিক জায়গায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা। ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নানারকম গুজব ছড়ানোর আশঙ্কায় অসম সরকারের মিনিস্ট্রি অফ হোম অ্যাফেয়ার্স-এর তরফ জারি করা হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা। আজ সন্ধে পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ থাকবে বলে খবর। তারপর পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আপাতত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে মোট ৫ হাজার আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। দিসপুর, গুয়াহাটি, ডিব্রুগড় এবং জোরহাটে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। কয়েকজন মহিলা সহ আহত হয়েছেন ২৫ জন। তাঁদের মধ্যে সাংবাদিক ও টিভি চ্যানেলের কর্মীরাও আছেন। অবরোধ ওঠাতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। ডিব্রুগড়ের চাউলধোওয়ায় পুলিশের লাঠিতে গুরুতর জখম হয়েছেন জনাকয়েক ছাত্র। বিক্ষোভের জেরে ডিব্রুগড় ও গুয়াহাটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যাবতীয় পরীক্ষা অর্নির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। গতকাল রাত থেকেই রাজপথে একের পর এক গাড়িতে আগুন ধরিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এ দিন সকাল থেকে ফের রাজপথে নেমে শুরু হয়েছে তাণ্ডব। টায়ার জ্বালিয়ে, স্লোগান তুলে রাস্তায় রাস্তায় চলছে অবরোধ। ফ্যান্সিবাজার, পানবাজার, উলুবাড়ি, গণেশগুড়িতে সকালে দোকানপাট খুললেও পরে সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। অসমে যখন বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে, তখন ত্রিপুরার বহু জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল করছেন অ-জনজাতিরা। মূলত জনজাতি প্রধান জেলাগুলিতে কোথাও লাঠি চালাতে হয়েছে পুলিশকে, কোথাও ছুড়তে হয়েছে কাঁদানে গ্যাস। বহু এলাকায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। ত্রিপুরায় নামানো হয়েছে বিএসএফ অসম রাইফেলস-এর জওয়ানদের। প্রশাসন সূত্রে খবর, আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর ও মনু এলাকায়। গুজব ছড়ানো আটকাতে ত্রিপুরায় মোবাইল, ইন্টারনেট এবং এসএমএস পরিষেবা আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
নাগরিকত্ব সংশোধন বিল নিয়ে আসামে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি জেলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জারি করা হয়েছে কারফিউ। স্থগিত করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ। গুয়াহাটি ইউনিভার্সিটি এবং কটন ইউনিভার্সিটি তাদের সব আন্ডারগ্রাজুয়েট এবং গ্রাজুয়েট পরীক্ষা স্থগিত করেছে। ধিব্রুগড়মুখী অথবা ধিব্রুগড় থেকে সব ফ্লাইট উড্ডয়ন বৃহস্পতিবারের জন্য বাতিল করেছে ইন্ডিগো বিমান সংস্থা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়েছে, রেলওয়ের সম্পত্তি নিরাপদ রাখতে গত রাতেই উত্তরপূর্বাঞ্চলের আক্রান্ত এলাকায় আরপিএসএফের ১২ কোম্পানি মোতায়েন করা হয়। দূরপাল্লার ট্রেনগুলোকে গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গুয়াহাটি ও কামাক্ষ্যায় আটকা পড়ে আছেন বহু ট্রেনযাত্রী। নিরাপত্তা ইস্যুতে আসাম ও ত্রিপুরার সব যাত্রীবাহীন ট্রেন স্থগিত করেছে নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ে। ওদিকে গুয়াহাটি ও আগরতলায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল চতুর্থ দিনের জন্য রনজি ট্রফি গেমস। কিন্তু কারফিউয়ের জন্য তা স্থগিত করা হয়েছে।