এভিয়েশন ডেস্ক:
ভারতের আকাশে বৃহস্পতিবার দুপুরে নেমে এল ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা। আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক অভিমুখে যাত্রা করা এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI171 উড্ডয়নের পাঁচ মিনিটের মাথায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মেঘানিনগর এলাকার একটি বহুতল আবাসনের ওপর আছড়ে পড়ে। দুর্ঘটনায় বিমানটির ২৪২ আরোহীর মধ্যে ২৪১ জনই নিহত হয়েছেন। অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন মাত্র একজন যাত্রী।
বিমানে ২৩০ জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রু ছিলেন। নিহতদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ ও একজন কানাডীয় রয়েছেন বলে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনাস্থলে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় আরও কয়েকজনের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে, তবে ভূমিতে কতজন মারা গেছেন তার সুনির্দিষ্ট হিসাব এখনও মেলেনি।
বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি ছিল বোয়িং ৭৮৭–৮ ড্রিমলাইনার। উড্ডয়নের পর মাত্র ৬২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছে বিমানটি সিগন্যাল হারিয়ে ফেলে এবং তীব্র শব্দে একটি চিকিৎসক হোস্টেলের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আগুনে পুড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঘটনার মুহূর্তে “আকাশে বিশাল আগুনের গোলা ও ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা যায়, মানুষ আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছুটছিল।”
বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী, ৩২ বছর বয়সী রাহুল সেন, বিমানের ডান পাশের জানালার পাশে বসা ছিলেন। তিনি বর্তমানে আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গভীর শোক প্রকাশ করে এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় আমরা হতভম্ব। এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত।” ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ও রাজা চার্লস তৃতীয়ও শোকবার্তা পাঠিয়েছেন।
দুর্ঘটনার পরপরই ভারতীয় অসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (DGCA), এয়ার ইন্ডিয়া, বোয়িং কোম্পানি, জিই অ্যারোস্পেস, ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড (NTSB) যৌথ তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, উড্ডয়নের সময় বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার পুরোপুরি উঠেনি এবং ফ্ল্যাপে অস্বাভাবিক ত্রুটি ছিল। ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের কাজ চলছে।
এই দুর্ঘটনার পর মার্কিন বিমান নির্মাতা বোয়িং-এর শেয়ারের দর ৫ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজে এটি প্রথম প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা, যা কোম্পানিটির নিরাপত্তা ও আস্থার প্রশ্নে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচলের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা। আন্তর্জাতিক স্তরেও সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এটি অন্যতম মারাত্মক ঘটনা। দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ এখনও চলছে। নিখোঁজদের শনাক্তকরণে ডিএনএ পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।