Home Second Lead করোনা আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে, সাবধান হোন বলছেন বিশেষজ্ঞরা

করোনা আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে, সাবধান হোন বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: করোনা যেন ঘুম ভেঙে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। চলতি জুন মাসেই অর্ধশতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, একজন মারা গেছেন। একে কেউ ভয়াবহ বলছেন না ঠিক, তবে গা ছাড়া দেওয়ারও সুযোগ নেই। দেশের ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, এই সংক্রমণ একেবারে হাওয়ায় আসেনি- ভারতের দিক থেকে আসছে নতুন ধরনের ভাইরাস, নাম এক্সএফজি আর এক্সএফসি। দুটোই করোনার পুরোনো দুষ্টচক্র অমিক্রনের ঘরে জন্ম নেওয়া নতুন সাবধরন। এখন সংক্রমণ অনেকের শরীরে লেগে থাকলেও জটিল রূপ নিচ্ছে না, তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি ঘুরে যেতে পারে হঠাৎই।

বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলছেন, ভয় না পেলেও সচেতন থাকা জরুরি। জনসমাগমে মাস্ক, হাত ধোয়া, দূরত্ব-এসব নিয়ম তো ভুলেই গেছি আমরা। আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন তিনি। একই সুর ডা. মুশতাক হোসেনের কণ্ঠেও। বলছেন, শুধু বয়স্ক আর অসুস্থরাই নন, ছয় মাস আগে যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁরাও যেন নতুন ডোজ নেন। কিন্তু টিকা কি আছে? ফাইজারের মোটামুটি ৩১ লাখ ডোজ মজুত ছিল, এর অর্ধেকের বেশি ইতিমধ্যেই চলে গেছে জেলায়-জেলায়। হাতে আছে মাত্র ১৪ লাখ ডোজ, আর তার মেয়াদ? মাত্র আগস্ট পর্যন্ত। সময় একদম হাতে গোনা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা জারি করেছে। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, বিশেষ করে ভারত ও আশপাশের দেশে। কারণ সেখানে নতুন ধরনগুলোর দাপট শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর আর নদীবন্দর—সবখানেই আবার তাপমাত্রা মাপা, স্ক্রিনিং, স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিইসহ পুরোনো দিনগুলোর চর্চা ফিরিয়ে আনতে বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

আইসিডিডিআর,বি-র তথ্য বলছে, মে মাসের শেষ দিকে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ২৫-এ পৌঁছায়। একই প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা জানাচ্ছেন, নতুন শনাক্ত ধরন এক্সএফজি ও এক্সএফসি—দুটিই অমিক্রনের জেএন-১ এর ছায়া সন্তান। ভারতের ধরন আবার এনবি ১.৮.১-যার নাম শুনেই বোঝা যায়, ভাইরাসও এখন একেবারে সিরিয়াল প্রোডাকশন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পর্যন্ত এই ধরনগুলোর নাম নিয়েই চিন্তায়।

স্বাস্থ্য বাতায়নের কল সেন্টার ১৬২৬৩-তে করোনাসংক্রান্ত কল বেড়ে গেছে হঠাৎ করে। সন্দেহ বাড়ছে, শঙ্কাও। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৩ জন। নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ১০১টি, সেখানে শনাক্তের হার প্রায় ১৩ শতাংশ। পুরোনো হিসাব বলছে, দেশে করোনা শনাক্তের মোট সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬০। মৃত্যু ২৯ হাজার ৫০০।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষা কিট, সুরক্ষাসামগ্রী এবং সবচেয়ে জরুরি—মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। দিনে অন্তত সাতবার, ২৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে আবার। মাস্ক পরতে হবে, অসুস্থ হলে ঘরে থাকতে হবে, আর সন্দেহ হলে হটলাইন (০১৪০১-১৯৬২৯৩) নম্বরে ফোন দিতে বলা হয়েছে।

করোনার সুনামি হয়তো আসেনি, তবে স্রোত শুরু হয়েছে এ কথা স্পষ্ট। প্রস্তুতি না থাকলে এই ঢেউও বিপদ ডেকে আনতে পারে।