ডায়াবেটিস এখন ঘরে ঘরে। আট থেকে আশি কাউকেই ছাড়ছে না। এই ডায়াবেটিসই কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ, এমনটাই বলছেন, কলকাতার সিনিয়র ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট অ্যান্ড ডিভাইস স্পেশ্যালিস্ট ডা. দিলীপ কুমার। তিনি বলেছেন, ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যেই সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক বাড়ছে। কোনওরকম যন্ত্রণা ছাড়াই এই অ্যাটাক আচমকাই আসে, রোগীকে বাঁচানোর সময়টুকু পাওয়া যায় না।
নিঃশব্দে হানা দিচ্ছে হার্ট অ্যাটাক, কারণটা কি ডায়াবেটিস?
ডা. দিলীপ কুমার এক সাক্ষাৎকারে জানালেন, ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ যেখানে রক্তে শর্করা বা সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিন নামে একটি হরমোন যা প্যানক্রিয়াসের বিটা সেল থেকে নিঃসৃত হয়। সাধারণত, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে সেটি লিভারে গিয়ে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। ইসুলিন এই গ্লুকোজকে দেহকোষের মধ্যে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। কোষের ভেতরে গ্লুকোজ অক্সিডাইজড হয়ে অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট (এটিপি) তৈরি করে যার থেকে শক্তি আসে। এই শক্তিই কোষের পুষ্টি জোগায়।
কিন্তু যদি বিটা কোষ নষ্ট হয়ে যায় এবং ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায় তাহলে এই প্রক্রিয়াটা বাধা পায়। ইনসুলিন কোষের মধ্যে প্রবেশের জন্য যে রিসেপ্টরটি লাগে, সেটি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ইনসুলিন আর ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ইনসুলিন কোষের মধ্যে গ্লুকোজকে প্রবেশ করাতে পারে না। রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যায়। একে বলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস। আর এই টাইপ ২ ডায়াবেটিসই সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের কারণ।
যন্ত্রণাহীন হার্ট অ্যাটাক আসার আগে শরীর জানান দেন
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গগুলি আমরা অনেক ক্ষেত্রেই অন্য রোগের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলি। ডা. দিলীপ কুমার বলছেন, অনেক সময়ে এই ধরনের হার্ট অ্যাটাকে সে ভাবে কোনও ব্যথাও অনুভব করেন না রোগী। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঘটে যায় হার্ট অ্যাটাক। আচমকাই আসে আর সব তছনছ করে দিয়ে চলে যায়।
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক যখন হয় তখন কোনও ব্যথা-বেদনা বোঝা যায় না। কিন্তু শরীর অনেক আগে থেকেই জানান দেয়। যেমন—প্রচণ্ড ঘাম হয়, খুব ক্লান্ত লাগে, অ্যাংজাইটি হতে থাকে, দুর্বল লাগে। বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাকে বুকের মাঝখানে বা বাম দিকে অস্বস্তি হয় যা কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় কিংবা সাময়িক চলে যায় এবং আবার সেই ব্যথা কিছুক্ষণ পরে ফিরেও আসে।
ঘাড়, কাঁধ, চোয়ালেও ব্যথা হতে থাকে, এমন হলে সাবধান হতে হবে। এক জায়গায় বসে থেকেও ক্লান্তি আসতে পারে। যখনই প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হয়, আমরা ওষুধ খেয়ে থাকি। জেনে রাখুন, হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ হল প্রতিদিনের প্রচণ্ড মাথা ব্যথা।
সুস্থ থাকতে রোজকার জীবনযাত্রায় অনিয়মে লাগাম টানতেই হবে। অতিরিক্ত চিন্তা, মদ্যপান, ফাস্ট ফুড বেশি খাওয়া, ডায়াবেটিস , ওজন বেশি থাকা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে। নিয়মিত শরীরচর্চা ও খাদ্যাভাসে সামান্য অদলবদল করলেই রক্তে বাড়তি শর্করা বশে রাখা যায়। এখন কায়িক পরিশ্রম অনেক কম হয়। কাজেই আলস্য বেড়েছে তার ওপর অনিয়মিত ডায়েট তো রয়েছেই। চটজলদি ফাস্টফুড খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সবুজ শাকসব্জি, ফলের বদলে পাস্তা, পেস্ট্রি, কোল্ড ড্রিংকস, আইসক্রিম, নুডলস ইত্যাদি হাই ক্যালোরির খাবারেই রুচি বেশি। এই সমস্ত খাবার বেশি করে খাওয়া এবং কম পরিশ্রম করার ফলে ওবেসিটি হচ্ছে। এই ওবেসিটিই ভবিষ্যতে সুগার, প্রেসার, হার্টের অসুখের রিস্ক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।