সকালের নাস্তায় পাঁচ কেজি গরুর মাংস খেতেন। তা না হলে ২৫ থেকে ৩০টি মুরগির ডিম দিয়ে নাস্তা করতেন।
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
বাঘা ( রাজশাহী ):বাঘার সেই ১৮ কেজি মাংস ও ১শো ডিম খাওয়া বাবুল আক্তার (৫০) আর বেঁচে নেই। সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাত ১১টায় নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়েছে (ইন্নালিল্লাহি ……….রাজিউন)।
বাবুল আক্তার উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত খেলাফত উল্লাহ সরকারের ছেলে। দীর্ঘদিন থেকে কিডনি ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি । মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টায় গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে বাবুলের লাশ দাফন করা হয়। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজন ও গুণাগ্রাহী রেখে গেছেন।
২০১৮ সালে বাবুল আক্তার ১৮ কেজি খাসির মাংস এবং ১শো মুরগির ডিম এক টেবিলে বসে খেয়েছিলেন। তিনি খেতে বসলেই ২০ থেকে ২৫ কেজি ওজনের একটি কাঁঠাল নিমিষেই খেতে পারতেন। বিদ্যুতের গতিতে ১১ মণ ওজনের কাঁঠের গুল একাই কাঁধে তুলে নিয়ে বহন করতেন। এক দৌড়ে ১৫-২০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতেন অনায়াসেই। একটানা চার ঘণ্টা সাঁতার দিয়েও ক্লান্তি বোধ করতেন না তিনি। ১২৫ কেজি ওজনের বিশাল দেহ নিয়ে অনায়াসে গাছে উঠে ডাব পেড়ে খেতেন। তবে কারো সাথে বাজি ধরেই এ কাজ করতেন।
বাবুলের স্ত্রী লাইলা বেগম বলেন, শাশুড়ি বলতেন সে ১৯৭৩ সালে জন্মের পরপরই নাকি পৌনে এক কেজি করে গরুর দুধ পান করতেন। এপর বেড়ে ওঠার পাশাপাশি আরও বেশি খাবার লাগতো। তিনি প্রাপ্ত বয়সে প্রতিদিনের সকালের নাস্তায় পাঁচ কেজি গরুর মাংস খেতেন। তা না হলে ২৫ থেকে ৩০টি মুরগির ডিম দিয়ে নাস্তা করতেন। এটা ছিলো তার স্বাভাবিক খাবার। আর কেউ বাজি ধরলে তো কোনো কথাই নেই। ১০ থেকে ১৫ কেজি মাংস ও ৫০ থেকে ১শো ডিম খেয়ে ফেলতেন। বয়স বৃদ্ধির পর শারীরিক কিছু সমস্যার কারণে চিকিৎসকের কথা মতো খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন।
মেয়ে যুথি খাতুন বলেন, বাবা একজন শক্তিশালী মানুষ ছিলেন। তার বিশাল দেহ আর অস্বাভিক খাদ্য ভক্ষন করায় তার নাম হয়ে যায় ‘খাদক বাবুল আক্তার’। যার স্বাভাবিক খাদ্য তালিকায় ৫ কেজি গরুর মাংস লাগতো। কিন্তু শারীরিক সুস্থতার কথা ভেবেই খাদ্য তালিকা কমিয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়া তার ভবিষ্যত ভেবে পরিবারের লোকজনও সেই ভাবে আর খেতে দিতেন না।
ছেলে নবাব আলী বলেন, ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জীবনের প্রথম তার বন্ধুদের সাথে রাজধানীর ঢাকায় গিয়েছিলেন। ওই দিন রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ‘ভূত রেস্তোরা’ নামের একটি হোটেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে ভূত রেস্তোরায় শতাধিক লোকের মধ্যে ১৮ কেজি খাসির মাংস এবং ১শো ডিম এক টেবিলে বসে খেয়েছিলেন। এমন অবাক করা খাওয়া দেখে মিডিয়ার নজরে আসেন। ওই সময় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ‘খাদক’ ‘ভোজন রসিক’সহ আরও কত নামে তাকে প্রচার করা হয়।
মনিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, বাবুল আক্তারের অনেক জমি ছিল। সাংসারিক ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতেন না। জমি বিক্রি করে খেয়ে প্রায় শেষ করেছেন। তবে শারীরিক সমস্যার কারণে পরিবার মৃত্যুর আগে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিল।