এভিয়েশন ডেস্ক: আহমেদাবাদ থেকে হৃদয়বিদারক ঘটনার খবর মিলেছে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন ইশা মহেশ্বরী ও ভাবিক। কিন্তু সুখের সেই শুরুতেই নেমে এল বিভীষিকার ছায়া। এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানে প্রাণ হারিয়েছেন ভাবিক। ইশার হাতে এখনও মেহেন্দির দাগ শুকোয়নি, আর তিনি পুতুলের মতো চুপ হয়ে বসে রয়েছেন স্বামীর মরদেহের অপেক্ষায়।
ভাবিক মহেশ্বরী, বয়স মাত্র ছাব্বিশ, পেশাগত কারণে দীর্ঘদিন ধরে থাকতেন লন্ডনে। গত ১০ জুন গুজরাটের ভদোদরায় ধুমধাম করে তাঁর বিয়ে হয় ইশার সঙ্গে। পরিবারে আনন্দের জোয়ার, বন্ধুবান্ধবদের ভিড়, ভবিষ্যতের স্বপ্ন সব মিলিয়ে জীবন যেন এক নতুন মোড় নিয়েছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে।
১২ জুন, তিনি লন্ডন ফেরার উদ্দেশ্যে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে রওনা দেন। সেই যাত্রাই হয়ে দাঁড়াল তাঁর জীবনের শেষ যাত্রা। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটিই ভেঙে পড়ে শহরের মেডিক্যাল কলেজ হস্টেলের ছাদে। ভাবিকের সিট ছিল ২৬এফ। খবর পাওয়ার পর থেকে উৎকণ্ঠায় কেঁপে উঠেছিল ইশার পরিবার। কিছুক্ষণ পর নিশ্চিত হওয়া গেল, ভাবিক আর নেই।
ইশার এক কাকিমা জানান, “ওর তো এখনও মেহন্দিও শুকোয়নি। বিয়ের গন্ধ ঘর থেকে যায়নি। এখন সেই ঘরেই শোকের ছায়া।” ইশা শোকে বাকরুদ্ধ, মূর্ছা গিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে তাঁকে। ভাবিকের মৃতদেহ গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছে তাঁর পরিবার।
শুধু ভাবিক নন, অভিশপ্ত বিমানে ছিলেন আরও অনেকে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পূজা ও হরশিত, এক দম্পতি। পূজা ছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। দুর্ঘটনায় তাঁদেরও মৃত্যু হয়েছে। সিভিল হাসপাতালের প্রাঙ্গণে বসে কাঁদছেন পূজার দাদা নৌতিক মাতে ও তাঁর স্ত্রী শিবাঙ্গী। “কয়েকমাস পর মামা হওয়ার কথা ছিল। এখন দিদি আর দিদিভাইয়ের দেহ নিতে এসেছি,”—কান্নায় ভেঙে পড়েন নৌতিক।
বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই উদ্ধার হয়েছে বিমানের ব্ল্যাকবক্স। মেডিক্যাল কলেজ হস্টেলের ছাদ থেকে সেটি পাওয়া গেছে। ব্ল্যাকবক্স থেকে প্রাপ্ত তথ্য দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
এই দুর্ঘটনা শুধু কয়েকটি প্রাণ কাড়েনি, তছনছ করে দিয়েছে অনেক স্বপ্ন, অনেক পরিবার। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এক নববধূ হয়ে উঠেছেন বিধবা। এক ভবিষ্যৎ মা-ও তাঁর অনাগত সন্তানের সঙ্গে হারিয়ে গেছেন চিরতরে।