Home জাহাজ ভাঙা শিল্প অনিশ্চয়তায় টালমাটাল বিশ্ব জাহাজভাঙ্গা শিল্প

অনিশ্চয়তায় টালমাটাল বিশ্ব জাহাজভাঙ্গা শিল্প

সংগৃহীত ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক সংঘাত, অর্থনৈতিক মন্দা এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প বা শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। সস্তায় পুরনো জাহাজ কেনা এবং তা থেকে লোহা, যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান আহরণ করে বহু বছর ধরে যে খাতটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে বিবেচিত হতো, বর্তমানে তা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিপব্রেকিং কেন্দ্রসমূহ বাংলাদেশের সীতাকুণ্ড, ভারতের আলাং, পাকিস্তানের গাদানি এবং তুরস্কের আলিয়াগা সবকটিতেই একই সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। একদিকে জাহাজের সরবরাহ সংকট, অন্যদিকে পরিবেশগত ও শ্রমিক সুরক্ষার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ এই খাতকে ব্যয়বহুল করে তুলেছে।

কেন সংকটে পড়েছে শিল্পটি?

২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে বৈশ্বিক শিপিং খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা, হুথি বিদ্রোহীদের মাধ্যমে রেড সি রুটে হামলা, ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষের সম্ভাবনা এসব কারণে অনেক দেশ পুরনো জাহাজ বিক্রি না করে দীর্ঘ মেয়াদে চালাতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে স্ক্র্যাপযোগ্য জাহাজের সরবরাহ কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

বিশ্ব শিপিং বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্লার্কসন রিসার্চের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বৈশ্বিক শিপব্রেকিং কার্যক্রম কমেছে ৪২ শতাংশ। বিশেষ করে ১৫ বছরের বেশি বয়সী ট্যাঙ্কার ও বাল্ক ক্যারিয়ারগুলো এখনও সচল রয়েছে, বিক্রির সম্ভাবনা নেই।”

মূল্যবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক চাপে নতুন জটিলতা

ডলার মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক লেনদেনের সীমাবদ্ধতা এবং জাহাজ আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক-কর আরোপের কারণে শিপব্রেকিং কোম্পানিগুলো এখন আগের মতো সহজে বড় জাহাজ কিনতে পারছে না। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো উচ্চ ঝুঁকি বিবেচনায় শিপব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছে।

এছাড়া, IMO (International Maritime Organization), ILO (International Labour Organization), ও Basel Convention-এর অধীনে বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে পুরনো জাহাজ আমদানি ও ভাঙার ক্ষেত্রে পরিবেশগত শর্ত কঠোর হয়েছে। অ্যাসবেস্টস, ভারী ধাতু ও তেলজাতীয় বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণে ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ।

শ্রমিক ও অর্থনীতিতে পড়ছে বিরূপ প্রভাব

দক্ষিণ এশিয়ার শিপব্রেকিং কেন্দ্রগুলোয় লক্ষাধিক শ্রমিক সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এই খাতে যুক্ত। কিন্তু জাহাজ কম আসায় কাজের পরিমাণও কমেছে। অনেক জায়গায় শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তান ও ভারতের উপকূলবর্তী জাহাজ ভাঙ্গা এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের খবরও মিলেছে।

বিশ্ববাজারে পুনর্ব্যবহারযোগ্য লোহার দামে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। একদিকে চীনের ধীরগতি উৎপাদন, অন্যদিকে ইউরোপের কড়া পরিবেশ নীতি শিপব্রেকিং থেকে পাওয়া স্ক্র্যাপ রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, “শিপব্রেকিং খাত এখন নতুন নীতিগত ও প্রযুক্তিগত রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তায় পড়েছে। না হলে আগামী ৫ বছরে এই শিল্প তার অস্তিত্ব হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।”

📣 আপনার মতামত দিন:
 নিচে কমেন্টে জানিয়ে দিন আপনার মতামত।
আপনার ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ার করুন প্রতিবেদনটি।