বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: দেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আর্থিক ও নীতি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাংলাদেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের সংকট ও প্রতিকার নির্ধারণ’ শীর্ষক ওয়েবনার থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।
ওয়েবনারে জানানো হয়, মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প খাতে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার হয়ে থাকে। তবে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এ খাতের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ব্যবসায়িক কর্মকা- পরিচালনায় অর্থপ্রবাহ নিশ্চিত করাই এখন উদ্যোক্তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, এ মহামারী সংকট শুরু হওয়ার পরপরই সরকার তা মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তবে ঘোষিত এ প্যাকেজ হতে ঋণ সুবিধা পাওয়া উদ্যোক্তাদের সংখ্যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয় এবং বর্তমান অবস্থা উত্তরণে তিনি ব্যাংকসমূহকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। দীর্ঘদিন ধরেই দেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প বিশেষ করে আমাদের এসএমই খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে এবং এ খাতের সার্বিক উন্নয়নে তিনি সরকারের নীতিসহায়তা, দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রশিক্ষণ প্রদান, শুল্ক কাঠামোর সংস্কার, আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানো এবং আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপ করেন।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি এমএ মোমেন বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যান্য খাতগুলোর মধ্যে এখাতটি খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ। তিনি বলেন, এ খাতের উদ্যোক্তারা নিজেদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছেন।এটি একটি শ্রম ঘন শিল্প হওয়ার, এর মাধ্যমে অনেক বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব, তাই এখাতের প্রয়োজনীয় পরিচর্যার কোন বিকল্প নেই।
ডিসিসিআই’র সভাপতি শামস মাহমুদের সঞ্চালনায় পরিচালিত এ ওয়েবনারে নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত, বাংলাদেশ পেপার ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা, হাসেম পেপার মিলস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমল হোসেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সসোরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারর্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. আবদুল কাদের খান, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল, বাংলাদেশ লোকাল কার্টন ম্যানুফেকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. বাশার পাটোয়ারী এবং চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফোন অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ বেলাল প্রমুখ যোগদান করেন।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ প্রকাশনা ও মুদ্রণ খাতে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রকৃতি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তিনি গবেষণা পরিচালনা করা এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতিসহায়তা প্রদানের ওপর জোরারোপ করেন। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করে সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, তবে এখাতের উদ্যোক্তাদের ১০০ কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের সক্ষমতা রয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রায় ৫ লাখ মানুষ সরাসরিভাবে জীবিকা নির্বাহে মুদ্রণ খাতের ওপর নির্ভরশীল এবং কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কালে এখাতের বাৎসরিক মোট ১২ হাজার কোটি টাকার বাজারের মধ্যে প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি এ শিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার জন্য ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ হতে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিতরণের ওপর জোরারোপ করেন।
বাংলাদেশ পেপার ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এখাতের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রিয়া ৭০ শতাংশ কমে গেছে এবং বর্তমান অবস্থা উত্তরণে প্রণোদনা প্যাকেজের সুষম বণ্টনের প্রস্তাব করেন।