Home আন্তর্জাতিক রিটজের রাজকীয় পরিবেশে ব্রিটিশ রন্ধনবিপ্লব

রিটজের রাজকীয় পরিবেশে ব্রিটিশ রন্ধনবিপ্লব

পুরনো গ্ল্যামার, ক্লাসিক ফ্রেঞ্চ খাবার আর ঐতিহ্য রক্ষার মধ্য দিয়েই জয় রিটজের

আজহার মুনিম, লন্ডন: লন্ডনের ঐতিহাসিক রিটজ হোটেলের রেস্টুরেন্ট এবার ব্রিটেনের সেরা রেস্টুরেন্টের মর্যাদা অর্জন করেছে। ৯ জুন ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যাওয়ার্ডসে রিটজ এই শীর্ষ স্বীকৃতি লাভ করে।

রেস্তোরাঁটি ১১৯ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও আজকের আধুনিক খাবারের জগতে সে নতুন করে আলোচনায় এসেছে। মাত্র কয়েক মাস আগেই এটি দ্বিতীয় মিশেলিন স্টার অর্জন করে এবং ২০২৪ সালে ব্রিটেনের রাজা চার্লস হোটেলটিকে রাজকীয় ওয়ারেন্টও প্রদান করেন।

পুরো লন্ডনে যখন আধুনিক ও সৃজনশীল রান্নার ধারা ছড়িয়ে পড়েছে, তখন রিটজ তার পুরনো ধাঁচের ক্লাসিক ফ্রেঞ্চ রন্ধন ও রাজকীয় পরিবেশ দিয়েই বিচারকদের হৃদয় জয় করে। লাইভ পিয়ানো সংগীত, লিভারিতে পরিবেশন করা ক্রেপ সুজেট, বিফ ওয়েলিংটন ট্রলি আর ডাক প্রেস– সব কিছুই যেন একশ বছর আগের ইউরোপীয় রাজপ্রাসাদের ছোঁয়া নিয়ে আসে।

রেস্টুরেন্ট ম্যাগাজিনের সম্পাদক স্টেফান চমকা বলেন, “রিটজ এমন এক রেস্তোরাঁ যেখানে প্রবেশ করলেই আপনি অন্য এক জগতে পৌঁছে যান। এটি প্রতিদিনের জন্য নয়, বরং বিশেষ দিনের জন্য, যেখানে খাবার ও সেবার মান একই সঙ্গে অসাধারণ এবং স্মরণীয়।”

এ রেস্তোরাঁয় পুরুষদের জন্য টাই ও জ্যাকেট বাধ্যতামূলক, খেলাধুলার জুতা নিষিদ্ধ। মেন্যুতে রয়েছে ব্রিটানির কবুতর, টারবট ‘টন স্যর টন’, যার সঙ্গে দামি ওয়াইন পরিবেশিত হয়। সাত পদের একেকটি খাবারের মূল্যে যেখানে ২২১ পাউন্ড, আর ওয়াইন জুড়লে ৭৫০ পাউন্ড পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তবুও রেস্টুরেন্টটি প্রায় প্রতিদিনই পূর্ণ থাকে।

রিটজের এই সফলতাকে ‘পরিশ্রম, ঐতিহ্য এবং এক অনবদ্য ঘরের চিরন্তন আবেদন’-এর বিজয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন টেলিগ্রাফের সমালোচক উইলিয়াম সিটওয়েল। তিনি রেস্টুরেন্টটির এক্সিকিউটিভ শেফ জন উইলিয়ামসের (২০০৪ সাল থেকে যিনি দায়িত্বে আছেন) নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

এ বছরের পুরস্কারে ফরাসি খাবারের পুনরুত্থান লক্ষ্য করা গেছে। লন্ডনের ফারিংডনের বুছঁ র‍্যাসিন পঞ্চম স্থান পেয়েছে এবং খ্যাতনামা ফরাসি শেফ ক্লদ বোসির তিনটি রেস্টুরাঁ স্থান পেয়েছে শীর্ষ ৫০-এ।

এছাড়া ল্যাঙ্কাশায়ারের মুর হল দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে এবং এর শেফ মার্ক বারচাল হয়েছেন বছরের সেরা শেফ। আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন হেকফিল্ড প্লেসের স্কাই গিংগেল।

যদিও লন্ডনের আধিপত্য প্রকট—শীর্ষ ২০-এর মধ্যে ১৫টি এবং শীর্ষ ১০-এর ৭টি রেস্টুরেন্ট শহরটিতে—তবু গ্রামের পাবে, খামারে কিংবা প্রকৃতির কোলে থাকা রেস্টুরেন্টগুলোও যথেষ্ট স্বীকৃতি পেয়েছে।

সম্পাদক চমকার ভাষায়, “রুস্টিক ফ্রেঞ্চ, গ্রিক, ভারতীয়, ব্রিটিশ, থাই, চীনা, আফ্রিকান, স্প্যানিশ, কোরিয়ান ও ইতালিয়ান খাবারের বিচারে এ দেশের রেস্টুরেন্ট জগত বিশ্বের সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ।”

তবে শেষ পর্যন্ত পুরনো ধারার রন্ধন ও ক্লাসিক পরিবেশই আবারও প্রমাণ করল—ব্রিটেনের রসনাভুবনে এখনো ‘পুটিন অন দ্য রিটজ’।