বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: পটুয়াখালী সদর থানার চারাবুনিয়া গ্রামে শুক্রবারের দুপুরে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। একই ঘরে গলা কেটে হত্যা করা হলো শতায়ু কুলসুম বিবি ও তাঁর নাতি আল আমিনের সৎ মা সহিদা বেগমকে। এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে স্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা এলাকা।
কুলসুম বিবির বয়স এক শতকেরও বেশি। কেউ বলেন ১০৫, কেউ বলেন ১২৫। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে এলেও তাঁর জীবনীশক্তি ছিল বিস্ময়কর। নিজের কাজ নিজে করতেন। দোয়া-দরুদ পড়তেন, সন্তান-সন্ততির মঙ্গল কামনায় রাতে ঘুমাতেন। গ্রামের মানুষরা শ্রদ্ধা করতেন তাঁকে। এমন একজন নারীর জীবন এভাবে শেষ হবে—কল্পনাও করেনি কেউ।
যুবক আল আমিন, যার মানসিক ভারসাম্যহীনতার কথা পরিবার আগেই জানত, কয়েক দিন আগে বাড়িতে ফিরেছিলেন। পরিবার তাঁকে পাবনায় পাঠানোর পরিকল্পনা করছিল। শুক্রবার দুপুরে, যখন বাড়িতে কেবল দাদি ও সৎ মা ছিলেন, ঠিক তখনই ঘটে সেই বিভীষিকাময় ঘটনা।
প্রতিবেশীরা জানায়, প্রথমে সে তার সৎ মা সহিদা বেগমকে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর দাদি কুলসুম বিবিকে গলা কেটে হত্যা করে নিশ্চিত করে যে কেউ বেঁচে না থাকে। ঘটনার পরপরই সে পালিয়ে যায়।
বাড়ির লোকজন ফিরে এসে রক্তাক্ত দুই দেহ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে আহাজারিতে ভেঙে পড়ে। প্রতিবেশীরা ছুটে এসে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
স্থানীয়রা বলছে “এমন তো কখনও ভাবিনি। এত বছর বেঁচে ছিলেন, কোনো রোগ-ব্যাধি ছাড়াই। আল্লাহর রহমতে হয়তো আরও কিছুদিন জীবিত থাকতেন। কিন্তু নিজের নাতির হাতে এমন নিষ্ঠুর মৃত্যু এই কষ্ট কারো ভাগ্যে না আসুক।”
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আল আমিন পলাতক। তাকে ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
শতায়ু এক নারীর এমন মৃত্যু এবং পরিবারের ভেতরে থেকে ঘটানো এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড আমাদের সমাজব্যবস্থা ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা কাঠামোর প্রতি বড় প্রশ্নচিহ্ন রেখে গেল।