ডলার সংকটের কারণে সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানিতে বিঘ্ন হচ্ছে। বলা হয়, নতুন করে এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনও করতে পারছে না কারখানাগুলো। ফলে সিমেন্ট উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে পরিবহন ব্যয়।
বাংলাদেশ সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতি-বিসিএমএ’র সংবাদ সম্মেলন
বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
বাংলাদেশ সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতি-বিসিএমএ চুনাপাথর আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেল এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিসিএমএ সভাপতি আলমগীর কবির। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিসিএমএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. শহীদুল্লাহ, নির্বাহী সদস্য আমিরুল হক ও নির্বাহী পরিচালক শংকর কুমার রায়।
আড়াই দশক পূর্বে সিমেন্টের প্রায় সম্পূর্ণ চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হতো। কিন্তু গত আড়াই দশকে উদ্যোক্তাদের সাহসী পদক্ষেপ ও সরকারের নীতি সহায়তার কারণে সিমেন্ট শিল্প একটি বিকাশমান শিল্প ও তুলনামূলক সুসংগঠিত খাত হিসেবে বিবেচিত হতো। দেশের চাহিদা মিটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশেও সিমেন্ট রপ্তানি করে আসছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৫টি দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান সিমেন্ট উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এর বার্ষিক কার্যকরী উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৭৯ মিলিয়ন টন। যার বিপরীতে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩৯ মিলিয়ন টন। চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণের বেশি উৎপাদনক্ষমতা থাকার কারণে বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে নামমাত্র মূল্যে সিমেন্ট বিক্রি করতে হয়। এতে আর্থিকভাবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় :কাঁচামালের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেলে সিমেন্টের দামও বেড়ে যেতে বাধ্য এবং এতে সাধারণ মানুষই ভুক্তভোগী হবে বলে । বলছেন, সিমেন্ট কোনো বিলাস দ্রব্য নয়, মানুষের বাড়ি তৈরির কাঁচামাল। এটির দর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সব কিছু করা উচিত। কিন্তু করা হচ্ছে উল্টে।
বিসিএমএ সভাপতি আলমগীর কবির বলেন, ‘চুনাপাথর আমদানির ক্ষেত্রে আগে থেকেই ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর ও ৩ শতাংশ অগ্রিম আয় কর রয়েছে। তবে হঠাৎ করেই সম্প্রতি এই পণ্য আমদানিতে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া অগ্রিম আয়কর বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এই অতিরিক্ত শুল্কায়নের ফলে চুনাপাথর ছাড় করাতে বর্তমানে ৬৭ শতাংশ শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হচ্ছে। আগে এই পরিমাণ ছিল ২৭ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণত সম্পূরক শুল্ক করা হয় বিলাস দ্রব্য, অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সামাজিকভাবে নিরুৎসাহিত পণ্যের ক্ষেত্রে। তবে নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে সিমেন্ট জনগণের মৌলিক চাহিদা বাসস্থান নির্মাণে ব্যবহার হয়। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের কাঁচামাল চুনাপাথর আমদানিতে কেন সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
চুনাপাথরকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ী কাঁচামাল দাবি করে বিসিএমএ সভাপতি বলেন, ‘সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য পাঁচটি প্রধান কাঁচামাল হলো- ক্লিংকার, স্লাগ, চুনাপাথর, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম। এর মধ্যে চুনাপাথর আমদানির মূল্য সবচেয়ে কম। এখন বাড়তি শুল্কের কারণে চুনাপাথর আমদানিতে নিরুৎসাহিত হতে পারেন ব্যবসায়ীরা। এতে অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ বাড়লে তাতে শেষমেষ ডলারের উপর চাপ বাড়বে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অগ্রিম আয়কর কমানোর বিষয়ে তারা বহুদিন যাবত বলে আসলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং আমদানি পর্যায়ে আরও ২ শতাংশ অতিরিক্ত অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে। আলমগীর কবির বলেন, ‘একটি সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লোকসান করলেও, তাকে চূড়ান্ত কর হিসেবে এই অগ্রিম আয়কর পরিশোধ করতে হবে যা কোনো বিবেচনায়ই গ্রহণযোগ্য নয়।’
ডলার সংকটের কারণে সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানিতে বিঘ্ন হচ্ছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, নতুন করে এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনও করতে পারছে না কারখানাগুলো। ফলে সিমেন্ট উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে পরিবহন ব্যয়।