বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অনুকূল জলবায়ুর কারণে কক্সবাজার জেলায় সুপারি চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পাহাড়ি ও সমতল উভয় অঞ্চলের কৃষকেরা সুপারিকে অর্থকরী ফসল হিসেবে দেখছেন। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অনেক কৃষক ধান ও অন্যান্য শস্যের বদলে সুপারি চাষে ঝুঁকছেন।
বিশেষ করে রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, মহেশখালী ও পেকুয়া উপজেলায় সুপারি চাষের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। স্থানীয় কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে জেলায় সুপারি বাগানের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
উৎপাদনে সাফল্য, বিপণনে সংকট
উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাফল্য এলেও বিপণন ব্যবস্থায় রয়েছে নানা সমস্যা। কৃষকেরা জানান, স্থানীয় বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে তাদের লাভের পরিমাণ অনেক সময় কমে যায়। এছাড়া আধুনিক প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও পরিবহনের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় সুপারি নষ্ট হয়ে যায়।
টেকনাফ উপজেলার চাষি মোহাম্মদ হোসেন বলেন,
“প্রতি বছর কয়েক হাজার কেজি সুপারি উৎপাদন করি। কিন্তু পরিবহন ও বাজারজাত করার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় কম দামে বিক্রি করতে হয়।”
সম্ভাবনার দিগন্ত
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, কক্সবাজারে উৎপাদিত সুপারি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি সহায়তা পেলে এই ফসল জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
জেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানালেন, “সুপারি চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আমরা প্রশিক্ষণ, পরামর্শ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তবে বাজারজাতকরণে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুপারি চাষকে লাভজনক করতে হলে স্থানীয় পর্যায়ে সুপারি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন, সরাসরি কৃষক-বাজার সংযোগ তৈরিতে সহায়তা, সুপারি সংরক্ষণের জন্য আধুনিক গুদাম ব্যবস্থা এবং রপ্তানি প্রক্রিয়ায় সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
স্থানীয়রা মনে করেন, কক্সবাজারের সুপারি চাষ কৃষকের জন্য একটি নতুন আশার আলো হয়ে উঠছে। তবে সুষ্ঠু বিপণন ও সরকারি নীতিগত সহায়তা ছাড়া এই সম্ভাবনা পূর্ণতা পাবে না। সময়মতো পদক্ষেপ নিলে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে সুপারি হতে পারে একটি রপ্তানিযোগ্য ও টেকসই কৃষিপণ্য।