Home First Lead ২০২০ সালেও  তৈরি পোশাক রপ্তানি চ্যালঞ্জের মুখে

২০২০ সালেও  তৈরি পোশাক রপ্তানি চ্যালঞ্জের মুখে

শাহাদাত মুহাম্মদ :

বিশেষ প্রতিনিধি

২০১৮ সালের চাঙাভাব ২০১৯ সালেও রপ্তানিতে বজায় থাকবে, এমন আশা করা হলেও তা হয়নি। বছরটা খুব একটা ভাল যায়নি। দেশের অর্থনীতি যে রপ্তানির ওপর ভর করে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল তা হোঁচট খেয়েছে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে। জুলাই থেকে নভেম্বর এই ৫মাসে রপ্তানি কমেছে সাড়ে সাত ভাগের বেশি। যার বড় অংকটা মূলত তৈরি পোশাক, ১১০ কোটি ডলার। নতুন বছরওে এই খাতে আশার আলো দেখছেন না রপ্তানিকারকরা ।

এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে যে রেসপন্স পাচ্ছি তাতে ২০১৯ এর চেয়ে এ বছর খুব একটা ভাল যেতে পারবো সেটা মনে হচ্ছে না। আমি মনে করি ২০২০ টা তৈরি পোশাকের জন্য আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে বিশেষ করে রপ্তানিকারকদের জন্য।

নতুন বছরে রপ্তানি আয় কতোটা ঘুরে দাড়াবে তার অনকেটাই নির্ভর করবে তৈরি পোশাক খাত কতোটা ভালো করবে তার ওপর। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছনে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এর পুরোটাই নির্ভর করছে নীতি ও নগদ সহায়তার ওপর।

 বিজিএমইএ-র সভাপতি রুবানা হক বলেন, ”ঘুরে যদি দাঁড়াতে হয় তাহলে এখনই আমাদের কারেন্সি দেখতে হবে। অবমূল্যায়নের কথা বলবো না কিন্ত এটা বলতে পারি আমরা যেটা রিটেইন করি সেটার ওপর ৫টা টাকা দিলে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াবে তা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। এর বাইরে যেটা করতে হবে তা হচ্ছে পণ্যের বহুমুখীকরণ যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ”

কিন্তু সার্বিকভাবে শিল্প উৎপাদন বাড়াতে ও কর্মসংস্থান তৈরিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। রপ্তানির মত পণ্যের চাহিদা কমছে অভ্যন্তরীণ বাজারেও। এতে বিক্রি কমেছে সিমেন্ট, ইস্পাত, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক, মোটর সাইকেলসহ বেশ কিছু পণ্যের।

চাহদিা কমায় উৎপাদনও কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বিনিয়োগেও অস্বস্তি নিয়ে শেষ হয়েছে ২০১৯। পুরো বছরই স্থবির ছিল বেসরকারি বিনিয়োগ।  আগস্ট র্পযন্ত মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিও কমেছে সাড়ে ১২ ভাগের মত। খুব একটা গতি নেই বেসরকারি ঋণ প্রবাহে।

এ প্রসঙ্গে বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, ”এ মুহুর্তে ফাইন্যান্সিয়াল সিটুয়েশন বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের অবস্থা ভালো না, আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কিন্তু সেই হিসাবে নতুন করে কেউ ব্যবসার সম্প্রসারণে যাচ্ছে না, ব্যাংক সেভাবে অর্থায়ন করছে না। ” এনার্জিপ্যাক লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ”শিল্পকে বাঁচাতে হলে উৎপাদনশীল খাতে ব্যাংকের সুদ হার ৯ ভাগে আনতে হবে।  তা না হলে শিল্পের জন্য টিকে থাকা বড় চ্যালেঞ্জ হবে।  আমাদানি বেড়ে যাবে, কর্মসংস্থান হবে না।

প্রশ্ন হলো সামষ্টিক অর্থনীতির এমন নাজুক অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে কিভাবে? আর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে নীতি সংস্কারের চ্যালেঞ্জ উতরাতে হবে সরকারকে নতুন বছরে। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ”সরকার যেসব সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছে যেমন ভ্যাট আইন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস করার উদ্যেগ, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, চট্টগ্রাম বন্দরের সংস্কারে উদ্যোগ এগুলো যদি সময়মতো দীর্ঘসূত্রিতা থেকে বের করে এনে ঠিকমতো করতে পারি তাহলে অর্থনীতির যে মন্দাভাব এখন দেখা যাচ্ছে সেটি থেকে বেরিয়ে আসার একটি সুযোগ তৈরি হবে।”

যা করতে পারলে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জও উতরে যেতে পারবে সরকার, কাজের বাইরে থাকা বিপুল জনগোষ্ঠির জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সেই সাথে দারিদ্র্য কমানো কমানো আর বৈষম্য দূর করাও সরকারের পরিকল্পনার  বড় অংশ থাকবে নতুন বছরে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ র্অথনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, ”আমাদের লক্ষ্য দারিদ্র দূর করার পাশাপাশি বৈষম্য কমিয়ে আনা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।  নতুন বছরে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করবো। ”

এখন দেখার বিষয় কতটা দক্ষতার সাথে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেল করতে পারে সরকার। যার ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গতি প্রকৃতি।