Home First Lead বৈদেশিক কর্মসংস্থান: উত্তরের ১৬ জেলায় সর্বোচ্চ অবস্থানে বগুড়া

বৈদেশিক কর্মসংস্থান: উত্তরের ১৬ জেলায় সর্বোচ্চ অবস্থানে বগুড়া

নাসিমা সুলতানা ছুটু

বগুড়া: বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে মাঝে দুই বছর বিদেশে কর্মী যাওয়ার হার কমলেও এখন প্রতিদিনই বাড়ছে এই হার। তবে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার। ২০২৩ সালে বগুড়া থেকে ২৭ হাজার ৬৪ জন কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। এটি ছিলো গত ছয়বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক। পাশাপাশি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সবচে কম রেমিট্যান্স এসেছে।

ওই অর্থ বছরে ১৫০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা ছিল গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচে’ কম। এ তথ্য দিয়েছে জানিয়েছে জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো অফিস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের পরিবর্তে হুন্ডি এবং মোবাইলে বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কারণে এ অবস্থ।

বগুড়া জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো অফিস সূত্র জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার মধ্যে বৈদেশিক অভিবাসনে বগুড়াই সবার উপরে। সারাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ১৬তম অবস্থানে রয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বগুড়া জেলা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৬৬ জন অভিবাসী হয়েছেন।

এদিকে করোনাকালীন দুই বছর ২০২০ ও ২০২১ সালে বিদেশে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা কমলেও ২০২২ সাল থেকে তা বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী বিদেশে গিয়েছে। ওই অফিসের তথ্যানুযায়ী ২০১৮ সালে বগুড়া থেকে ১৪ হাজার ৮৬০জন কর্মী বিদেশে গিয়েছে। ২০১৯ সালে ৮ হাজার ৭৪৪ জন, ২০২০ সালে ২ হাজার ৬৪০ জন, ২০২১ সালে ৯ হাজার ১৯ জন, ২০২২ সালে ১৫ হাজার ৬২১ জন এবং ২০২৩ সালে ২৭ হাজার ৬৪ জন কর্মীর  বিদেশে গিয়েছে।

২০২৩ সালে জেলার সবচে বেশি শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে বিদেশে গিয়েছে এবং সবচেয়ে কম গিয়েছে সারিয়াকান্দি উপজেলা থেকে। সূত্র জানিয়েছে, রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসন বাড়লেও কমছে রেমিট্যান্সের হার। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে জেলায় রেমিট্যান্স আসে ১৬০ দশমিক ৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ২০১৮ দশমিক ২ মিলিয়ন ইউএস ডলার, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ১৮৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার এবং ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ১৫০ দশমিক ৭  মিলিয়ন ইউএস ডলার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য সরকার প্রণোদনাসহ নানা প্রচারণা চালালেও দিনদিন অভিবাসীরা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তারা এখন ব্যাংকের পরিবর্তে বিকাশ, নগদসহ বিভিন্ন অ্যাপস বা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।

শহরের সূত্রাপুর এলাকার গৃহিণী রাহিজা বেগম জানান, তার মেয়ে প্রায় ৭-৮ বছর থেকে কানাডায় বসবাস করছে। বৈবাহিক সূত্রে সে কানাডা গিয়েছে। আগে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালেও বেশ কিছুদিন থেকে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছে। এতে না কী সুবিধা বেশি।

শহরের বিআরটিসি মার্কেটের এক বিক্রয়কর্মী জানান, তার ছোট ভাই বেশ কয়েক বছর আগে শ্রমিকের কাজ নিয়ে মালোয়েশিয়ায় গিয়েছে। ওখান থেকে আগে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালেও বছরখানেক হলো মোবাইলে টাকা পাঠায়। জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ আতিকুর রহমান জানান,  উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার মধ্যে বৈদেশিক অভিবাসনে বগুড়াই সবার উপরে।

সারা দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ১৬তম অবস্থানে রয়েছে এই জেলা। ২০২৩ সালে রেকর্ড সংখ্যক কর্মী বিদেশে গিয়েছে। তবে সেই অনুযায়ী রেমিট্যান্স আসছে না। হুন্ডি বা অন্য মাধ্যমে অভিবাসীরা টাকা পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। ব্যাংক ও খোলা বাজারে ডলারের বিনিময় হারের পার্থক্য রয়েছে, এই দ্বিমুখী নীতিসহ নানা ঝামেলা এড়াতেই অভিবাসীরা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন না।