Home First Lead নিবন্ধন বাতিলের দ্বারপ্রান্তে আওয়ামী লীগ, সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত ইসি

নিবন্ধন বাতিলের দ্বারপ্রান্তে আওয়ামী লীগ, সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত ইসি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা:  নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ এক উত্তাল ও অনিশ্চিত সময় পার করছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতি এখন নির্ভর করছে একটিমাত্র সরকারি গেজেটের ওপর। নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, সরকারের গেজেট প্রকাশের পরই আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রোববার (১১ মে) রাজধানীতে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন এ কথা জানান। তিনি বলেন, “গেজেট প্রকাশ হলে কমিশনের আনুষ্ঠানিক বৈঠক বসবে। তখন আমরা রাজনৈতিক বাস্তবতা, সংবিধান ও দেশের চেতনা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। যদি গেজেট আগামীকালই আসে, তাহলে সিদ্ধান্তও কালই হতে পারে।”

সিইসি আরও বলেন, “জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে দেশের পরিস্থিতি আমাদের কাছে পরিষ্কার। জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান নেবে।”

গোপনে দেশত্যাগ, মাঠে নামে নতুন রাজনৈতিক বলয়:

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলমান বিরোধিতার সূত্রপাত ঘটে ৭ মে মধ্যরাতে, যখন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গোপনে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই রাজনৈতিক মাঠে নতুন গতিপথ তৈরি হয়।

পরদিনই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নতুন রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং আন্দোলনের জন্য রাজপথে নামে। এনসিপির সঙ্গে যুক্ত হয় আরও কয়েকটি সংগঠন ও দল, যার ফলে রাজপথে সৃষ্টি হয় অভূতপূর্ব এক ঐক্যবদ্ধতা।

তিন দফা দাবি এবং জনতার বিক্ষোভ:

দুই দিন ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের মুখে মুখে একটি স্লোগান—আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করো, জনগণের দাবি মানো।

তিন দফা দাবির মধ্যে প্রধান ছিল—আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনের বিচার, এবং জাতীয় পুনর্গঠনের রূপরেখা প্রকাশ।

এ আন্দোলনের প্রতি দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সমর্থন দেখা যায়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠে এই দাবিগুলোর পক্ষে।

সরকারের সিদ্ধান্ত: গেজেট আসছে সোমবার:

এই পরিস্থিতির মধ্যে শনিবার রাতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন—আন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি জানান, এ বিষয়ে সরকারিভাবে গেজেট প্রকাশ করা হবে সোমবার (১২ মে)।

তিনি বলেন, “গণদাবি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে সরকারের এই সিদ্ধান্ত জরুরি ও সময়োপযোগী। দেশের সংবিধান, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতেই এটি নেওয়া হয়েছে।”

নিবন্ধন বাতিল কি অনিবার্য?

নির্বাচন কমিশনের নীতিগত অবস্থান বলছে সরকারি গেজেট প্রকাশের পর একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হলে নির্বাচন কমিশনের হাতে সেই দলের নিবন্ধন বাতিল করার সাংবিধানিক এখতিয়ার রয়েছে।

যদিও কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি, তবে সিইসি নাসির উদ্দিনের বক্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন টিকিয়ে রাখার কোনো নীতিগত জায়গা আর বাকি নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার, যখন একটি দীর্ঘমেয়াদি শাসকদল আইনি ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লষকরা মনে করেন, “এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বড় বাঁক পরিবর্তন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ হবে একটি ঐতিহাসিক পর্বের ইতি। তবে এ সিদ্ধান্ত কতটা টেকসই হয়, তা নির্ভর করবে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর।”