হেলথ ডেস্ক:
ডায়াবেটিস বা মধুমেহ হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেখানে শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। এটি নিয়ন্ত্রণ না করলে অনেক গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বর্তমান সময়ের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন ও অ্যালার্জি বেড়ে যাওয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিসের রোগী সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ডায়াবেটিসের কারণ
ডায়াবেটিসের মূলত দুইটি প্রধান ধরন রয়েছে:
টাইপ ১ ডায়াবেটিস:
যেখানে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। এটি সাধারণত ছোট বেলা বা কিশোর বয়সে হয়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস:
শরীর ইনসুলিন তৈরি করে, কিন্তু সঠিকভাবে কাজ করে না বা পরিমাণ কমে যায়। এটা বেশি হয় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এবং অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে হয়।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়:
- অতিরিক্ত ওজন বা পেটের মোটা ভাব
- অনিয়মিত ও কম সক্রিয় জীবনযাপন
- পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকা
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ করে ফ্রি শর্করার অতিরিক্ত গ্রহণ
- মানসিক চাপ
ডায়াবেটিসের প্রধান লক্ষণ
- অতিরিক্ত পিপাসা ও ঘাম
- বারবার মূত্রত্যাগ
- ক্ষুধা বেশি লাগা
- ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া
- ধূসর বা ঝাপসা দৃষ্টি
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- ধীরে ঘা সারানো
যদি এসব লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহজ ও কার্যকর উপায়
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করুন
- শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখুন, বিশেষ করে ফ্রি চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান।
- ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খান যেমন হোলগ্রেইন রুটি, চাল, শাকসবজি ও ডাল।
- প্রোটিন খান পর্যাপ্ত পরিমাণে, যেমন ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম ও লেগিউম।
- ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার, যেমন সাডিনস, স্যামন মাছ বেশি খান।
২. নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
দৈনিক হালকা হাঁটা, যোগব্যায়াম বা অন্যান্য ব্যায়াম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত মোটা ভাব কমাতে চেষ্টা করুন, কারণ পেটের মোটা ভাব ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়ায়।
৪. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন
ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নিন।
৫. মানসিক চাপ কমান
চাপ ও উদ্বেগ বাড়লে শরীরে হরমোন পরিবর্তিত হয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কিছু বিশেষ টিপস
- দিনে অন্তত ৩০ গ্রাম ফাইবার খান।
- গ্রীন টি বা আদার চা পান করতে পারেন, যা মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
- বেশি তেল-মশলা কম খান ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- খাবার নিয়মিত সময়ে খান, অতিরিক্ত ক্ষুধা এড়ান।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন ও মানসিক স্বাস্থ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ এবং নিয়মিত পরীক্ষা করাই সঠিক পথ। সঠিক যত্ন নিলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং সুস্থ জীবন যাপন করা যায়।
আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপনার পছন্দের খাদ্য বা অভ্যাস কী? নিচে কমেন্টে জানিয়ে আমাদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আরও স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে প্রশ্ন করতে পারেন।