বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট একটি বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রস্তাব অনুযায়ী, বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ব্যবসায়ী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, বিমান ও নৌ পরিবহন, নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন, ফ্র্যাঞ্চাইজ চুক্তি, বিতরণ ও লাইসেন্সিং, প্রযুক্তি উন্নয়ন, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ডোমেইন নাম, ভৌগোলিক নির্দেশক, বীমা, অংশীদারিত্ব চুক্তি, পরিষেবা খাত ও শেয়ারহোল্ডার-যৌথ উদ্যোগ সংক্রান্ত বিরোধ সবই এই আদালতের আওতায় আসবে। এর ফলে আধুনিক ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত প্রায় সব ধরনের মামলা একটি বিশেষায়িত কাঠামোর ভেতরে দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জেলা জজদের মধ্য থেকে বাণিজ্যিক আদালতের বিচারক নিয়োগ করা হবে। একই সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগে একটি বিশেষ বাণিজ্যিক আপিল বেঞ্চ গঠন করবেন প্রধান বিচারপতি। মামলা দায়েরের আগে মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে আদালতে যাওয়ার আগেই অনেক বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে এবং বিচার ব্যবস্থার উপর চাপ কমে।
বাণিজ্যিক আদালতে বিচার্য মামলার জন্য মূল্যসীমা ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। তবে প্রয়োজনে সরকার সময় অনুযায়ী এই সীমা পরিবর্তন করতে পারবে। বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, চূড়ান্ত শুনানি ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট সময়সীমা রাখা হয়েছে—হাইকোর্ট বিভাগে ছয় মাসের মধ্যে এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তিন মাসের মধ্যে।
এ ছাড়া, আদালতের কার্যক্রমকে আরও ফলপ্রসূ করতে সংক্ষিপ্ত বিচারের বিধান, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, বিচারক ও আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ এবং ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়নের বিষয়েও সুপ্রিম কোর্ট প্রস্তাবে গুরুত্ব দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তি হবে আরও গতিশীল, বিনিয়োগ পরিবেশ হবে স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব, এবং দেশীয়-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।