Home আন্তর্জাতিক লন্ডনে এনফিল্ডের মেয়র আমিরুলের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ

লন্ডনে এনফিল্ডের মেয়র আমিরুলের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ

মেয়র মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম
আজহার মুনিম, লন্ডন: লন্ডনের এনফিল্ড কাউন্সিলের মেয়র মোহাম্মদ আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ–এর অনুসন্ধানে প্রকাশ, তিনি আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের ভিসা পেতে নিজের পদমর্যাদা এবং কাউন্সিলের অফিসিয়াল লোগো ব্যবহার করেছিলেন।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেয়র থাকা অবস্থায় তিনি ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিগুলিতে অনুরোধ করা হয়েছিল তাঁর ৪১ জন আত্মীয় ও বন্ধুর ভিসা দ্রুত বিবেচনা করার জন্য। কখনো অফিসিয়াল চিঠি এবং কখনো ভুয়া কাগজ বানিয়ে তিনি এই কাজটি করেছেন।

তদন্ত ও গোপন প্রতিবেদনের তথ্য

২০২৪ সালের মে মাসে ব্রিটিশ হোম অফিস সন্দেহজনক চিঠির বিষয়টি কাউন্সিলকে অবহিত করে। এরপর একটি ১৬০ পৃষ্ঠার গোপন তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, মেয়র হওয়ার আগেও আমিরুল ইসলাম এমন চিঠি পাঠাতেন।

তদন্তে দেখা গেছে, এসব চিঠিতে আবেদনকারীদের পাসপোর্ট নম্বর ও জন্মতারিখের মতো সংবেদনশীল তথ্য দেওয়া হয়েছিল। চিঠিগুলিতে লেখা ছিল, অতিথিদের উপস্থিতি তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের ব্যয়ভার তিনি বহন করবেন। তবে শেষ পর্যন্ত আমন্ত্রিত ৪১ জনের মধ্যে কেবল একজন বাংলাদেশি অতিথি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

তদন্তকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আমিরুল ইসলাম জানান, আগের মেয়ররাও আত্মীয়দের ভিসা প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতেন, তিনি সেই প্রথা অনুসরণ করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁর দপ্তর থেকে ১৩টি চিঠি পাঠানো হয়েছিল, তিনি নিজে আরও ৬টি চিঠি প্রেরণ করেছেন। বাকি ১১টির ক্ষেত্রেও তাঁর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

কাউন্সিলের কয়েকজন কর্মকর্তা আপত্তি জানালে, তিনি নিজ হাতে ভুয়া চিঠি তৈরি করে পাঠিয়েছেন। কিছু চিঠি এমন সময় প্রেরিত হয়েছে যখন তিনি মেয়র হওয়ার আগেই তা পরিকল্পনা করেছিলেন।

প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ

আমিরুল ইসলাম বলেছেন, “আমি বাংলাদেশে জন্মেছি। মেয়র হওয়ায় পরিবার ও বন্ধুরা গর্বিত ছিল। তারা অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিতে চাইলে আমি চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাস্তবে কেউ ভিসা পাননি।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে একটি এজেন্সি তার স্বাক্ষর জাল করে ভিসা সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছে এবং এ বিষয়ে তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তদন্তে বলা হয়েছে, শপথ অনুষ্ঠানে অতিথিদের ভিসার জন্য অনুরোধ করা স্বাভাবিক হলেও, আমিরুল ইসলাম ব্যক্তিগত স্বার্থে সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। কিছু চিঠি প্রায় এক বছর আগে প্রেরণ হওয়ায় সন্দেহ আরও বেড়েছে।

২০২৫ সালের মে মাসে তিনি মেয়র হিসেবে এক বছর পূর্ণ করেছেন। অভিযোগ সত্ত্বেও তিনি ক্ষমা চাননি। লেবার পার্টি তাঁকে জুন ২০২৫-এ সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে। বর্তমানে তিনি স্বতন্ত্র কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

স্থানীয় রাজনীতিতে এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কনজারভেটিভ নেতা কাউন্সিলর জিওর্জিও আলেসান্দ্রো বলেছেন, “কাউন্সিল আগে থেকেই অভিযোগ জানত, তবুও তাঁকে মেয়র বানানো হয়েছে। এটি লজ্জাজনক। তাঁর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।”

কাউন্সিল জানিয়েছে, তদন্তের ফলাফলের প্রতি তারা পূর্ণ সমর্থন জানায়। পাশাপাশি আমিরুল ইসলামকে কিছু বিধিনিষেধ মানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—আর কোনো ভিসার জন্য সুপারিশ না করা, আচরণবিধি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা এবং আগের মেয়রের ব্যাজ ব্যবহার না করা।

হোম অফিস ও সমালোচনা

হোম অফিসের এক মুখপাত্র বলেছেন, “সক্রিয় তদন্তের বিষয়ে মন্তব্য করা অনুচিত, তবে সমস্ত অভিবাসন অপরাধের অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে তদন্ত করা হয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

মি. ইসলাম এখন স্বতন্ত্র কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি প্রথম এনফিল্ডের মেয়র যিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।