Home রাজনীতি পাড়ায় ধইর‍্যা মাইর‍্যা ফেলবো-যুবদল নেতার হুমকি

পাড়ায় ধইর‍্যা মাইর‍্যা ফেলবো-যুবদল নেতার হুমকি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ফরিদপুর: সালথা উপজেলায় প্রকাশ্য সালিশে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার প্রতিনিধি শফিকুল ইসলামকে ‘পিটিয়ে মেরে ফেলার’ হুমকি দিয়েছেন উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি কালাম বিশ্বাস এবং নিজেকে যুবদল নেতা দাবি করা বালাম দাই। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সালথা বাজারের বটতলায় এই ঘটনা ঘটে। এ সময় হুমকিদাতারা শফিকুল ইসলামের বড় ভাই ও দৈনিক নয়াদিগন্তের সালথা উপজেলা প্রতিনিধি মো. রেজাউল করিমকেও মারধরের চেষ্টা করে। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।

জানা যায়, সালথা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তরের সালথা প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম ও তার পরিবারের মালিকানাধীন একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন আনোয়ার মোল্যার ছেলে লিয়াকত মোল্যা (৩৩)। পরবর্তীতে শফিকুল ইসলাম ওই দোকানে নিজেরাই ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিলে ভাড়াটিয়া লিয়াকতকে মৌখিকভাবে ও পরে নিয়মানুযায়ী তিন মাসের নোটিশ দিয়ে ঘর ছেড়ে দিতে বলেন। লিয়াকত মোল্যা দোকান ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে শনিবার বিকেলে সালথা বাজার কমিটির সেক্রেটারির অফিসে এ বিষয়ে একটি সালিশ বসে।

সালিশ চলাকালীন সময়ে জামাল ওরফে বালাম দাই (৩০), কালাম বিশ্বাস (৪০), দেলোয়ার মাতুব্বর (৪০), সোহরাপসহ আরও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সেখানে এসে শফিকুল ইসলামকে প্রকাশ্যে হুমকি দিতে শুরু করে। শফিকুল ইসলাম জানান, বালাম দাই তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “সাংবাদিক হইছিস দেইখ্যা কি চ্যাটের বাল হয়ে গেছিস। পাড়ায় ধইর‍্যা মাইর‍্যা ফেলবো।” তিনি আরও বলেন, “কোনো সাংবাদিক গুনার টাইম নাই, আমরা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে বেড়াই। লিয়াকত মোল্যা তোদের দোকান ছাড়বে না, তুই যা পারিস তাই করে দেখা।”

এ সময় কালাম বিশ্বাস সাংবাদিক শফিকুল ইসলামকে “তোর মুখ থ্যাতলাইয়্যা দিবো” বলে তেড়ে আসেন। শফিকুল ইসলামের বড় ভাই মো. রেজাউল করিম এগিয়ে এলে তাকেও মারপিট করার চেষ্টা করা হয়। পরে সালথা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সমকালের সালথা উপজেলা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলামসহ অন্যান্যরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

অভিযুক্ত কালাম বিশ্বাস পূর্বেও সালথা উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি ছিলেন। অন্য অভিযুক্ত বালাম দাই নিজেকে যুবদল নেতা দাবি করেন এবং তার বিরুদ্ধে থানার দালালি ও সালিশ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তার নামে চুরি, চাঁদাবাজি, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের মামলাসহ একাধিক মামলা চলমান বলেও জানা গেছে। তার বাবা ইউনুস বিশ্বাস একজন গ্রাম পুলিশ।

এ বিষয়ে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি শুনেছি কিন্তু এই মুহূর্তে দুর্গাপূজার ডিউটিতে বাইরে রয়েছি বলে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। থানায় গিয়ে বিষয়টি দেখবো।”

সালথা প্রেসক্লাবের সভাপতি নুরুল ইসলাম এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর এ ধরনের বর্বরোচিত হামলার চেষ্টা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি। সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম ও তার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।”

ঘটনার পর থেকে স্থানীয় সাংবাদিক ও সুশীল সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা দ্রুত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।