ফিচার প্রতিবেদন
অশ্রুর সুর আর সংস্কারের গভীরতা
বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী তুজিয়া জনগোষ্ঠী বিয়ে নিয়ে এমন একটি রীতি পালন করে যা পৃথিবীর কোন আধুনিক সমাজে খুঁজে পাওয়া যায় না। এই রীতির নাম “কাঁদার উৎসব” বা Crying Marriage Custom—শোনায় অদ্ভুত, কিন্তু তুজিয়াদের কাছে এটি ভালোবাসা, সম্মান ও পারিবারিক বন্ধনের এক গভীর সাংস্কৃতিক প্রকাশ।
কাঁদা কেন?
তুজিয়া সমাজে বিশ্বাস করা হয়, বিয়ের আগে কনে যত বেশি কাঁদে, তার ভবিষ্যৎ বিবাহিত জীবন তত বেশি সৌভাগ্যবান হবে। কাঁদা এখানে দুর্বলতার প্রকাশ নয়; বরং এটি কৃতজ্ঞতা, আবেগ, ভালোবাসা ও পারিবারিক বিচ্ছেদের ব্যথার বাহন।
এই রীতি শোনায় কষ্ট লাগলেও আসলে এটি এক ধরনের সংস্কৃতিক আচার, যেখানে কনে তার মাকে, পরিবারকে এবং পূর্বপুরুষদের প্রতি সম্মান জানায় অশ্রুর মাধ্যমে।
কেমন হয় এই ‘অশ্রুর অনুষ্ঠান’?
বিয়ের এক মাস আগে থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। কনে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে কাঁদে। প্রথমে শুরু হয় তার একার কান্না দিয়ে। ধীরে ধীরে যোগ দেয় মা, খালা, বোন এবং অন্যান্য নারী আত্মীয়রা। তাদের সম্মিলিত কান্না যেন এক ধরনের ছন্দে বাঁধা লোকসঙ্গীত—যা স্থানীয় ভাষায় “ফুল কাঁদা গান” নামে পরিচিত।
অনুষ্ঠান চলাকালে কনে কখনও মুখ ঢেকে, কখনও মাথা নিচু করে, আবার কখনও চোখের জল মুছতে মুছতে গান তোলে—
পরিবার ছাড়ার কষ্টের গান, মায়ের প্রতি ভালোবাসার গান, ভবিষ্যৎ জীবনের আশা-ভয় একসাথে প্রকাশের গান।
কান্নার ভিতরেও আছে রঙিন আনন্দ
যদিও অনুষ্ঠানটি “কাঁদা” নামে পরিচিত, তবুও পুরো আয়োজনটি বিষণ্ণ নয়। চারপাশে সাজানো থাকে রঙিন পোশাক, উজ্জ্বল অলংকার, ঐতিহ্যবাহী নকশা। মহিলারা একসঙ্গে বসে গান করেন, খাবার তৈরি হয়, বাড়িতে জমে ওঠে উৎসবের পরিবেশ।
কাঁদার মধ্যেও হাসি-আনন্দের মিশেল—এটাই তুজিয়া সংস্কৃতির বিশেষত্ব।
সমাজে এর গুরুত্ব
তুজিয়া জনগোষ্ঠীর কাছে এই রীতি হলো—
“মেয়ের বিয়ের আবেগকে সম্মান জানানোর পবিত্র আচার।”
কনে দেখায় সে তার শিকড়, পরিবার ও উত্তরাধিকারকে কতটা ভালোবাসে। আর পরিবারও মেয়েকে ভবিষ্যতের আশীর্বাদ দেয় অশ্রুর মাধ্যমে।
অনেক গবেষকের মতে, এই রীতি তুজিয়া সমাজে নারীর অনুভূতি প্রকাশের এক নান্দনিক মাধ্যম।
এটি শুধু কান্না নয়, বরং একটি গল্প—যেখানে বিদায়ের ব্যথা আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন মিলেমিশে যায়।
আধুনিকতার ঢেউ
সম্প্রতি শহরমুখী জীবন, ব্যস্ততা ও পরিবর্তিত সামাজিক কাঠামোর কারণে এই রীতি অনেক জায়গায় কমে আসছে। তবুও তুজিয়া জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য সচেতন মানুষ এখনো তা আগলে রেখেছেন তাদের পরিচয়ের অংশ হিসেবে।










