বন্দর সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতির কারণে শনিবার সকাল থেকে বন্দর জেটিতে সব ধরণের পণ্য ও কন্টেইনার উঠানামা বন্ধ করে দেয়া হয়। একই সঙ্গে বন্দরের বিভিন্ন জেটিতে বার্থিং করা ১৬টি জাহাজকে পাইলটের সাহায্যে বহির্নোঙ্গরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বন্দরের অপারেশনাল কাজে ব্যবহৃত ইক্যুইপমেন্টগুলো সম্ভাব্য দুর্যোগে যাতে কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সেগুলো নিরপদ স্থানে নিয়ে রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, শুক্রবার বিকেলেই বন্দরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি সভা। সভায় সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা কওে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বন্দরে পণ্য উঠানামা, ডেলিভারিসহ সব ধরণের অপারেশনাল কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। জেটিতে থাকা জাহাজগুলোকে বহির্নোঙ্গরে নিরাপদে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে সবগুলো জাহাজকে সার্বক্ষণিক চালু অবস্থায় রাখতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতিমুলক ব্যবস্থা নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সিভিল সার্জন অফিসসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো। জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন ও প্রতিটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে মাইকিং করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ ২হাজার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১হাজার ২৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে ত্রান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নগদ টাকা, শুকনো খাবারসহ অন্যান্য ত্রান সামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ২৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি প্রস্তুত রেখেছে ১০হাজার সেচ্ছাসেবক।
উপকূলীয় উপজেলা আনোয়ারার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় জনিত সম্ভাব্য বিপদকে সামনে রেখে উপকূলীয় দুটি ইউনিয়ন রায়পুর ও জুইদন্ডীতে মাইকিং করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি যে কোন ধরণের দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর (সিপিপি) আওতায় ৭৫০ জন সেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে দামপাড়ায় চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে খোলা হয়েছে জরুরী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পতেঙ্গা ও কাট্টলী এলাকায় মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া চসিকের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় মেডিকেল টিম, শুকনো খাবার, উদ্ধারকারী যন্ত্রপাতি ও গাড়ি মজুদ রাখা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দুপুর সাড়ে বারোটায় প্রচারিত বিশেষ বুলেটিনে (বুলেটিন-২৪) বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন স্থানে অবস্থানরত অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ দুপুর বারোটায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার পশ্চিম- দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা বন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিন পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩১৫ কিলোমিটার দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তর পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে আজ শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ সুন্দরবনের নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অত্রিক্রম করতে পারে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।