বিজনেস টুডে ২৪
বাংলাদেশ থেকে প্রচুর রোগী যান প্রতিবেশি ভারতে। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল এবং সহজ। কম খরচে সেখানে পৌঁছা যায়। তাছাড়া রয়েছে ভাষাগত সুবিধা। এসব কারণে বাংলাদেশের অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য যেতেন সেখানে। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। কলকাতার চিকিৎসা ব্যবস্থার যে বদনাম ছড়িয়েছে তাতে সেখানকার প্রধান প্রধান বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। কলকতার পরিবর্তে তারা চলে যাচ্ছেন দিল্লী এবং চেন্নাই, হায়দ্রাবাদসহ দক্ষিণ ভারতের হাসপাতালে।
কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিং হোমগুলোর বিরুদ্ধে নানা গাফেলতি ও অনিয়ম এবং লাখ লাখ টাকার বিল দিয়েও সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ অনেকদিন ধরে। তবে গুরুতর অভিযোগ হলো বিলে কারচুপির। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো, বিনা কারণে রোগী ভর্তি করিয়ে নেয়া, যে চিকিৎসক দেখেননি তার ভিজিটের জন্য ফি নেয়া ইত্যাদি। পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয়দেরও অনেক অভিযোগ কলকাতার হাসপাতাল-নার্সিং হোমগুলোর বিরুদ্ধে। এত অভিযোগ যে শেষ পর্যন্ত স্বয়ং ওখানকার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণে কড়া আইনের ব্যাপারে নড়েচড়ে বসতে হয়েছিল একবার। সাত শতাধিক হাসপাতালের ওপর নিজস্ব সমীক্ষা এবং বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগসমূহের তালিকা নিয়ে তিনি হাসপাতালের বড় কর্তাদের বৈঠকে ডাকেন। চিকিৎসা না হওয়া সত্ত্বেও বিল বাড়িয়ে দেখানো, একই ঔষধ বার বার করে লেখা , অপ্রয়োজনেও আইসিইউ বা ভেন্টিলেশন দিয়ে দেয়া এবং দামি পরীক্ষার সুপারিশ করার বিভিন্ন অভিযোগ জানান তাদেরকে।
কলকাতার সবথেকে পুরনো বেসরকারি এক হাসপাতালে প্রতিবছর হাজার হাজার বাংলাদেশী রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন সেখানে। ওই হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ডাক্তার সুজিত কর পুরকায়স্থ-এর কাছে একবার বার্তা সংস্থা জানতে চেয়েছিল বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগসমূহের ব্যাপারে। তিনি বলেন, ‘ আমরা আসলে বেসিক ব্যাপারটা থেকে সরে গিয়ে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছি। উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তি আছে বলেই সেটা ব্যবহার করছি আমরা। কেউ বুকে ব্যথা নিয়ে এলে সেটা সাধারণ কোন কারণেও হতে পারে তা মনে না রেখে প্রথমেই আমরা এনজিওগ্রাফি করে ফেলি। বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল এটা করছে। প্রযুক্তি আছে বলেই সেটা ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া, বড় সমস্যা হলো রোগীর আত্মীয় পরিজনদের সাথে কথাবার্তা না বলা, তাদের যে বোঝাতে হবে কী চিকিৎসা হচ্ছে, কত খরচ হতে পারে, সেটা বলা হয় না। চিকিৎসা ক্ষেত্রে নৈতিকতাটাই আসলে হারিয়ে ফেলেছে অনেকে।’
অনেক চিকিৎসক জানান, অন্যান্য ব্যবসার ক্ষেত্রে যেমন টার্গেট বেঁধে দেয়া হয়ে থাকে, হাসপাতালগুলোও সে রকম টার্গেট বেঁধে দেয় ডাক্তারদের-পরীক্ষা করানোর টার্গেট, রোগী ভর্তির টার্গেট। তার ফলে অনেক সময়ে সেই চাপেই তারা অপ্রয়োজনে পরীক্ষা করাতে বা রোগী ভর্তি করাতে বাধ্য হন। এক চিকিৎসক জানান, কীভাবে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ডাক্তারদের ওপরে চাপ দেয়া হয় তা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিককালে কলকাতার হাসপাতালগুলোর নানা অব্যবস্থার কথা জানাজানি হয়ে যাওয়া, মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে চিকিৎসা ও হাসপাতালে ভর্তি বাধ্যতামূলক করার কারণে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। কলকতার কোন কোন হাসপাতালে তা হ্রাস পেয়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। এর আগে কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশী রোগী সংখ্যা। ঢাকুরিয়া, মুকুন্দপুর এবং সল্টলেকে এএমআরআই হাসপাতালের কেন্দ্রগুলোতে প্রতিমাসে প্রায় ২৫০০ রোগী চিকিৎসা নিতো। তা হ্রাস পেয়েছে । ভর্তি এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা উভয়ই কমে গেছে। কলকাতার প্রধান প্রধান আরও চারটি বেসরকারি হাসপাতালের চিত্রও একই রকম। কলকতায় কমে গেলেও দিল্লী এবং দক্ষিণ ভারতে বাংলাদেশী রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ কেউ কলকতায় নির্দিষ্ট কিছু টেস্ট করিয়ে সরাসরি ছুটছেন চেন্নাই বেঙ্গলোরের হাসপাতালে। এসব জায়গার হাসপাতালগুলোর ইমেজ কলকতার চেয়ে বেশি।