বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত আনতে পারে।
মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত , চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৯ এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫শ’ থেকে ৭’শ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে। এটি আরো ঘণীভূত হয়ে এগিয়ে আসতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১শ’ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সমুদ্রবন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি ও ঢাকাতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালি, পিরোজপুর ও ভোলাকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। বুলবুলের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূলবর্তী জেলাগুলোর সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
শক্তি বাড়িয়ে অতি ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে ধেয়ে আসছে ‘বুলবুল’। আজ শনিবার রাত থেকে রবিবার সকালের মধ্যে যেকোনো সময় বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের সুন্দরবনের ব-দ্বীপ অঞ্চলে আছড়ে পড়তে পারে এটি। প্রতি মুহূর্তে শক্তি সঞ্চয় করে বুলবুল সুন্দরবন উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমান গতিপথ অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের খুলনা-বরিশাল অঞ্চলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা।
সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে খুলনা ও বরিশাল জেলার উপকূলীয় অঞ্চল।
বৃহস্পতিবার রাতেই গভীর নিম্নচাপ থেকে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় (সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম)-এ পরিণত হয় ‘বুলবুল’। এখন সেটি ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা। তারা জানান, বুলবুল ছোবল দেয়ার সময় যদি সাগরে জোয়ার থাকে তবে প্রলয়ঙ্করী হয়ে উঠতে পারে। আর ভাটা থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র বলয়ে থাকা সাত জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করেছে। জেলাগুলো হলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ভোলা।
‘বুলবুল’ মোকাবেলায় ২২টি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে সরকার।