ওয়ালি উল মারুফ মতিন: ব্যাকরণ বুঝে আমরা কথা বলি না। তবে ব্যাকরণের বিধি না মানলে কথার অর্থই পাল্টে যাবে। আপনার কথা কেউ মানবে না। ডিসেম্বরের ২০১৯ প্রথম সপ্তাহে যখন এই কলাম লিখছি, তখন লেখচিত্র বলছে যে বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সূচক পড়েছে প্রায় ১৩০০ পয়েন্ট। শতকরা হিসেবে গত এগারো মাসে এই পতন হলো ২১%। বছরের শুরুতে হাত বদল হওয়া শেয়ারের সংখ্যা মোটামুটি ৩৩ কোটি শেয়ার। এখন সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি। প্রতিদিন শতকরা হিসেবে এই পতন হচ্ছে ৭০%। এই পতনে লাভবান হচ্ছেন কি কেউ?
বক কহে কচ্ছপে– “বাহবা কি ফুর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।
বাজারের এই পতনের কারণ খুঁজে দেখতে আমরা অনেকেই উৎসাহী। কিন্তু এখনও কেউ কিছু জানেনা। ব্যাকরণহীন এই বিনিয়োগ বাজারে কারা ফুর্তি করছে? তবে নিশ্চিত বক আর কচ্ছপের মত তারা অত্যন্ত ধৈর্যশীল আর স্লথ গতি সম্পন্ন। যদি কেউ আদৌ ম্যানিপুলেশনের মধ্যে থাকেন তবে তারা এখনই লাভের মুখ দেখতে চাচ্ছেন। তারা ব্যবসা করবেন যখন ব্যাকরণ মেনে আবার বাজার চলবে। জিডিপির সাথে সাযুয্যপূর্ণ বাণিজ্য শুরু হলেই শেয়ার বাজারের উত্থান অবশ্যম্ভাবী। আর যদি এখন কেউ কেউ যে ভাবে ম্যানিপুলেশনের গন্ধ পাচ্ছেন বলে লিখছেন বা বলছেন তা হলে এই উত্থান কবে হবে তা কোন বৈয়াকরণদের বোঝা সম্ভব নয়। তবে তাঁরা (যদি এই অদৃশ্য হাত থেকেই থাকে) তারা বেশিদিন নিজের নাক কেটে কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করতে থাকবেন না। গিরগিটি যদি টিয়ার মুখোশ নেয় তাকে ‘পোকা’ ছেড়ে কাঁচামরিচ চিবোতে হতে পারে।
টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা–
পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে কাঁচা লঙ্কা ?
এই চিড়িয়াখানায় রাজা সিংহের শিং নেই, নখ নেই, কান নেই। তর্জন গর্জন ছাড়া কিছুই করার নেই। আর হঠাৎ দ্রুতগামী লাভবানদের সাথে যদি সিংহের মিল হয়ে যায়, তবে ফল ভয়ানক হতে পারে।
সিংহের শিং নেই, এই বড় কষ্ট–
হরিণের সাথে মিলে শিং হল পষ্ট।
২০০৮–২০০৯ এর কথা মনে করি। তিন মাসে সূচক কমেছিল ৪২%। আরও আগে ১৯৯৬ সালে ৬ মাসে পড়েছিল ৭৫%। সেই সময়ের বিনিয়োগকারীদের ফটো এখনকার ছবি বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা অস্থির হবেন না। পতনে স্থির থাকাই ব্যাকরণ সম্পন্ন।
-(সুকুমার রায়ের কপিরাইট মালিকানা এতদিনে থাকার কথা নেই বেনেফিশিয়ারী একাউন্ট হোল্ডার নন। তাই নিজের লেখার সঙ্গে নির্দ্বিধায় মিলিয়ে নিলাম।)
লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মসলিন ক্যাপিটাল লিমিটেড।