Home স্বাস্থ্য ডায়াবেটিস এখন আর নীরব ঘাতক নয়, সচেতনতাই প্রধান প্রতিরোধ

ডায়াবেটিস এখন আর নীরব ঘাতক নয়, সচেতনতাই প্রধান প্রতিরোধ

হেলথ ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বাংলাদেশেও প্রতি বছর বাড়ছে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসকদের মতে, এটি এখন আর শুধু বয়স্কদের সমস্যা নয়, বরং তরুণ ও কিশোরদের মাঝেও এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তবে খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন ও সচেতনতার মাধ্যমে এই দীর্ঘমেয়াদি রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ডায়াবেটিস হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে দেহে ইনসুলিন হরমোনের ঘাটতি বা কার্যকারিতার অভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। টাইপ-১ ডায়াবেটিস সাধারণত শৈশবে শুরু হয় এবং রোগীকে আজীবন ইনসুলিন নিতে হয়। অন্যদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস মূলত জীবনধারা-নির্ভর, এবং এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য।

চিকিৎসকদের মতে, কিছু প্রাথমিক উপসর্গ দেখে সহজেই ডায়াবেটিস শনাক্ত করা যায়। যেমন ঘন ঘন প্রস্রাব, অতিরিক্ত পিপাসা, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা বা ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হওয়া।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের শহরাঞ্চলে ডায়াবেটিসের প্রকোপ গ্রামাঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য অপরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা ও দৈনন্দিন ব্যায়ামের অভাবকে দায়ী করছেন।

ডা. নাজমুল হক, এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, বলেন, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি জীবনধারা পরিবর্তনই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। রোজ অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার ও শর্করা নিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকায় শাকসবজি, লাল চাল, ডাল, বাদাম ও দুধ রাখতে বলা হয়। এদিকে মিষ্টি, কোমল পানীয়, সাদা চাল ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতাও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন পারিবারিক সহানুভূতি ও সঠিক মনোসামাজিক সহায়তা।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ডায়াবেটিস আক্রান্তদের বছরে অন্তত একবার পূর্ণ শরীর পরীক্ষা করা প্রয়োজন। রক্তে শর্করার মাত্রা ছাড়াও কিডনি, চোখ, দাঁত এবং পায়ের স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। একইসঙ্গে স্কুল পর্যায় থেকেই সচেতনতা তৈরি করা দরকার, যাতে আগাম ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্ম সুস্থ ও সচেতন থাকে।

তারা বলছেন, ডায়াবেটিস কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি নয়, বরং এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগের প্রকোপ অনেকটাই রোধ করা সম্ভব।