জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ৬ সদস্যের আপিল বেঞ্চ জামিন আবেদনটি খারিজ করে দেন ।
এর আগে সকাল ১০টার কিছু সময় পর খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। শুরুতে বিএসএমএমইউ’তে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। আদালত প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে এ আদেশ দেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল বলে মত দিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। একইসঙ্গে খালেদা জিয়া রাজি না হওয়ার কারণেই তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।
আপিল বিভাগে দাখিল করা খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনে এসব বলা হয়।
গতকাল বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ এই রিপোর্ট জমা দেয়। আজ বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রার আলী আকবর প্রতিবেদনটি দাখিল করলে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার এই প্রতিবেদনে মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি যেসব শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত, সেগুলো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তার। রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে তিনি শারীরিকভাবে বেশ দুর্বল। চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে চাইলেও তিনি রাজি না হওয়ায় তা দেয়া যাচ্ছে না।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৫ই ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের আপিলের রায় ঘোষণার কথা ছিল। তবে এর আগে আদালত খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন চাইলে তা ওই তারিখের আগে দিতে পারেনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ।
এডভোকেট জয়নুল আবেদিন
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষের দেয়া প্রতিবেদনটি ভুয়া বলে আখ্যায়িত করেছেন তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। খালেদা জিয়া পঙ্গু হওয়ার পথে রয়েছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হওয়ার পর আদালতকে এ কথা জানান তিনি। ১০টা ৮ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে এ শুনানি শুরু হয়। সকাল ১০টা ১০ মিনিট রেজিস্টার জেনারেল আলী আকবর বিএসএমএমইউয়ের প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন।
জয়নুল আবেদীন শুনানিতে আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে ভালো মানুষ গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আজ পঙ্গু হওয়ার পথে। তিনি হাত-পা নড়াতে পারছেন না। চিকিৎসা এতো উন্নত হচ্ছে যে দিন দিন তিনি পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। ৬/৮ মাস পর হয় তো তিনি লাশ হয়ে বের হবেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নিতাই রায় চৌধুরী, এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, একেএম এহসানুর রহমান প্রমুখ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।