Home স্বাস্থ্য শীতের শুরুতে নিয়মিত খাওয়া উচিত আমলকি, কেন জানেন?

শীতের শুরুতে নিয়মিত খাওয়া উচিত আমলকি, কেন জানেন?

দিনের বেলা অতটা বোঝা না গেলেও যেই না সূর্য অস্ত গেল, আমনি পারদ যাচ্ছে কমে। রাত যত বাড়ছে, তত কমছে তাপমাত্রা। এদিকে সকাল হতেই গরম আসছে ফিরে। এমন পরিস্থিতিতে শরীর খারাপ যে হবেই, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে। শরীরের ভালমন্দের যোগটা ঠিক কোথায়? এমন কিছু ফল আছে যা নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে শরীরে প্রচুর মাত্রায় প্রবেশ ঘটবে ভিটামিন সি, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং সোডিয়ামের, যা ভিতর এবং বাইরে থেকে শরীরকে এতটাই চাঙ্গা করে তোলে যে ঠান্ডা লাগা তো দূর, ছোটবড় বহু রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না। এই ওয়েদার চেঞ্জের মরসুমে আমাদের চাঙ্গা রাখতে পারে যে ফলটি সেটি হল আমলকি। প্রসঙ্গত, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে রোজের ডেয়েটে আমলকিকে জায়গা করে দিলে শরীরের নানা উপকার হয়, যেমন ধরুন

) গলার ব্যথা নিমেষে কমে যায়ঃ আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞদের মতে নিয়মিত এক গ্লাস আমলা রসে পরিমাণ মতো আদা এবং মধু মিশিয়ে খেলে গলার ব্যথা তো কমেই। সেই সঙ্গে কফ এবং সর্দিকাশির প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না। এমন ঠান্ডাগরম পরিস্থিতিতে গলা ব্যথা শুরু হলে আমলার রসকে কাজে লাগাতে দেরি করবেন না যেন!

) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটেঃ আমলকিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে ছোটবড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদেরও বার করে দেয়। ফলে আয়ু বাড়ে চোখে পরার মতো।

) দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটেঃ সারাক্ষণ কম্পিউটারমোবাইল ব্যবহার করার কারণে চোখের বারোটা বেজে যাক, এমনটা যদি না চান, তাহলে রোজের ডেয়েটে আমলকির থাকা মাস্ট! আসলে এই ফলটিতে উপস্থিত নানাবিধ উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন খেল দেখায় যে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে চোখ থেকে জল পরা, চুলকানি এবং চোখ ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও কমে।

) হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়ঃ দেখুন বাঙালি হয়ে জন্মেছি যখন, তখন একটু পেটুক তো হবই। আর সে কারণে গ্যাসঅম্বল যে রোজের সঙ্গী হবে, তা আর নতুন কথা কী! তাই তো কব্জি ডুবিয়ে মুড়ি ঘন্ট, মাছের কালিয়া আর পাঁঠার কারি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমলকিও যদি খেতে পারেন, তাহলে বদহজম নিয়ে আর চিন্তায় থাকতে হবে না। কারণ এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, যা হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোনও ধরনের পেটের রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।

) সংক্রমণের আশঙ্কা কমেঃ ভিটামিন সি হল সেই ব্রহ্মাস্ত্র, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে এতটাই মজবুত করে দেয় যে কোনও জীবাণুই সেই দেওয়াল ভেদ করে শরীরের অন্দরে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি ওয়েদার চেঞ্জের সময় সর্দিকাশির ভয়ও দূর হয়। আর একথা নিশ্চয় এতক্ষণে জেনে গেছেন যে আমলকি হল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। তাই এই ফলটি যদি নিয়মিত কাঁচা অবস্থায় অথবা শুকিয়ে খেতে পারেন, তাহলে শরীর বাবাজিকে নিয়ে যে আর চিন্তায় থাকতে হবে না, সে কথা হলফ করে বলতে পারি।

) ডায়াবেটিসের মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে নাঃ আমলকিতে ক্রোমিয়াম নামে একটি উপাদান থাকে, যা ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার সুযোগই পায় না। তাই সবশেষে একথা বলতেই হয় যে আমলকি খেলে কোনও ক্ষতি হয় কিনা, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত জানা না গেলেও এই ফলটি যে শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়, সে বিষয়ে যদিও কোনও সন্দেহ নেই।

) ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকেঃ পরিসংখ্যান বলছে যত দিন যাচ্ছে, তত যেন ক্যান্সার আমাদের ছায়া হয়ে উঠছে। মানে মানুষের যেখানে, সেখানেই এই রোগ নিজের থাবা বসাচ্ছে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানদের বার করে দিয়ে ক্যান্সার সেলের জন্ম যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ জীবনের পথ প্রশস্ত হয়।

) শরীরের বয়স কমেঃ আমলকিতে উপস্থিত একাধিক অ্যান্টিএজিং প্রপাটিজ শরীরের উপর বয়সের চাপ পরতেই দেয় না। ফলে বয়সের কাঁটা পাঁচের ঘর পেরলেও তার আঁচে শরীর ভেঙে যায় না। তাই শরীরকে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যদি চনমনে রাখতে চান, তাহলে একদিনও আমলকি খেতে ভুলবেন না যেন!

) শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করেঃ হার্টকে সুস্থ রাখতে চান? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে রোজ একটা করে আমলকি খাওয়া মাস্ট! কারণ এতে উপস্থিত একাধিক শক্তিশালী উপাদান, হার্টের আর্টারিকে আক্রমণ করা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও আর থাকে না।

১০) ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়ঃ আমলিতে এমন কিছু খনিজ এবং উপাকারি ভিটামিন আছে, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ত্বকের অন্দরে জলের ঘাটতি দূর করে, সেই সঙ্গে পুষ্টির চাহিদাও মেটায়। ফলে ধীরে ধীরে ত্বক উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, আমলকি শুকিয়ে তা দিয়ে বনানো পাউডারের সঙ্গে পরিমাণ মতো দই এবং মধু মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে যদি মুখে লাগাতে পারেন, তাহলে একথা হলফ করে বলতে পারি যে খাতায় কলমে আপনার বয়স বাড়লেও ত্বকের বয়স ভুলেও বাড়ার সাহস পাবে না।