প্রতি বছর স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যাটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। মূলত মহিলাদের মধ্যেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হলেও পুরুষরাও ঝুঁকির বাইরে নন। ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসার দিনে দিনে বাড়ছে। ক্যানসারের ডায়াগনসিস অনেকসময়েই এত দেরিতে হয় যে রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। স্তন ক্যানসারের এত বাড়বৃদ্ধি কেন হচ্ছে তার আসল কারণটা জানতে পেরে গেছেন বিজ্ঞানীরা। ক্যানসার চিহ্নিত করতে আর জটিল পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার নেই। বরং মুখ থেকে নেওয়া লালার নমুনা পরীক্ষা করলেই নাকি ধরা পড়বে স্তনে টিউমার কোষের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে কিনা। বিশ্বে প্রথম ক্যানসার ডায়াগনসিসে এমন যুগান্তকারী আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা।
ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটি ও তাইওয়ানের ন্যাশনাল ইয়াং মিং চিয়াও তাং ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা স্তন ক্যানসার টেস্ট করতে নতুন রকম স্ক্রিনিং ডিভাইস তৈরি করেছেন। লালার নমুনা থেকে ক্যানসার কোষের প্রোটিন চিহ্নিত করবে এই ডিভাইস। তার থেকেই ধরা পড়বে স্তন বা তার আশপাশে অবাঞ্ছিত টিউমার কোষ গজাচ্ছে কিনা।
লালার নমুনা (Saliva Test) থেকে কীভাবে ক্যানসার চিহ্নিত করা যাবে?
‘ভ্যাকুউম সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বি’ সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে। মুখ্য গবেষক সিয়াও হুয়ান আন জানিয়েছেন, স্তন ক্যানসার হলে HER2 এবং CA 15-3 নামে দুই প্রোটিনের বাড়বাড়ন্ত হয়। লালার নমুনা থেকে ওই দুই প্রোটিনকে চিহ্নিত করবে ডিভাইসের বায়োসেন্সর। ওই দুই প্রোটিন ক্যানসার কোষকে দ্রুত বিভাজিত করে। এই দুই প্রোটিনের মাত্রা যদি বেড়ে যায়, তাহলে ক্যানসার খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ডিভাইসটি খুবই ছোট। যে কেউ এই ডিভাইস দিয়ে নিজের লালার নমুনা পরীক্ষা করতে পারবে। ডিভাইসে লাগানো আছে পেপার স্ট্রিপ। এর সঙ্গে বায়োসেন্সর লাগিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পেপার স্ট্রিপে মুখ থেকে নেওয়া লালার নমুনা ফেললেই স্ট্রিপের বায়োমার্কার ওই দুই প্রোটিনের খোঁজ শুরু করবে। যদি ক্যানসার বাসা বাঁধে বা টিউমার কোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন শুরু হয়, তাহলে শরীর তাকে রুখতে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। ক্যানসার কোষের প্রোটিনদের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে তাদের নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করবে শরীরের অ্যান্টিবডি। বায়োমার্কার এই প্রোটিন ও অ্যান্টিবডিগুলোকেই চিহ্নিত করে বলে দিতে পারবে ক্যানসার কোষের জন্ম হয়েছে কিনা। যদি ক্যানসার প্রোটিন চিহ্নিত হয় তাহলে ডিভাইস সিগন্যাল দিয়ে তা জানান দেবে।
গবেষকরা বলছেন, ক্যানসার চিহ্নিত করাটাই আসল কাজ। সঠিক সময় ক্যানসার ধরা পড়লে চিকিৎসায় রোগ সেরে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকেই। কিন্তু ডায়াগনসিসেই এত দেরি হয়ে যায় যে ক্যানসার কোষগুলি বাড়তে বাড়তে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে একেবারে নষ্ট করে দেয়। তখন আর কিছু করার থাকে না। কিন্তু যদি আগে থেকেই রোগের কারণ ধরা যায় তাহলে ক্যানসার নির্মূল করার চেষ্টা করতে পারেন চিকিৎসক-গবেষকরা। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রেও সেই কারণটাই জানার চেষ্টা চলছিল এতদিন। ঠিক কী কারণে ক্যানসার কোষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সেই কারণটা জানা দরকার ছিল। ইঁদুরের উপর গবেষণা করে এই দুই প্রোটিনের খোঁজ মিলেছে যারা স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী। এবার মানুষের শরীরে পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।