দেশে ফলের উৎপাদন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাড়ছে ফল চাষের জমির পরিমাণও। এখন অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষ করছেন। কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বর্তমানে ধান, পাট ও অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফল চাষ অনেক বেশি লাভজনক।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে মোট এক কোটি ২১ লাখ টন ফল উৎপাদন হয়, যা গত ১০ বছরের তুলনায় ১৮ লাখ টন বেশি। বাংলাদেশ বিশ্বে পেয়ারা উৎপাদনে সপ্তম এবং আম উৎপাদনে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি এবং বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ফল চাষে বিশেষ এ সাফল্য এসেছে। দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষের পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনা ও সড়কের পাশে ফল গাছ রোপণ দিন দিন বাড়ছে। বছরে ১০ শতাংশ হারে ফল চাষের জমি বাড়ছে। এর সঙ্গে উৎপাদন বেড়েছে ১১ শতাংশ হারে।
দেশে বর্তমানে ৭০ প্রজাতির বেশি ফল চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে ৪৫ প্রজাতির ফল।
কৃষি কর্মকর্তারা আরও জানান, বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত ফলের ৫৩ শতাংশ বাণিজ্যিক বাগান থেকে আসে। বাকি ৪৭ শতাংশ ফলের জোগান আসে বসতভিটা ও তৎসংলগ্ন এলাকা থেকে।
দেশে বর্তমানে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারা, কলা, কুল, পেঁপে, আনারস ছাড়াও অনেক বিদেশি ফল যেমন- ড্রাগন, রাম্বুটান, স্টবেরি, মাল্টা, লংগন, অ্যাভোকোডা, মিষ্টি তেঁতুল, সৌদি খেজুরের চাষ দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সারাদেশে প্রায় সাত লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করে এক কোটি ২১ লাখ টন ফল উৎপাদন হয়, যা গত ১০ বছর আগের তুলনায় ১৮ লাখ টন বেশি।
চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছর সারাদেশে মোট এক লাখ ৯২ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়। আশা করা হচ্ছে, এতে আম উৎপাদন হবে ২৩ লাখ ৭২ হাজার ২১৬ টন। কাঁঠাল আবাদ হয়েছে ৭১ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন ১৭ লাখ ২৭ হাজার ৬০৪ টন।
এছাড়া প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে দুই লাখ ২৪ হাজার ২১১ টন লিচু, ৮৭ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমিতে ১৮ লাখ ৮৮ হাজার টন কলা, ৩৩ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে পাঁচ লাখ ছয় হাজার ৪৭৮ টন পেয়ারা, ১৭ হাজার ৫৮ হেক্টর জমিতে এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৬১ টন কুল, ৪৬ হাজার ৩৮ হেক্টর জমিতে ছয় লাখ ৬৩ হাজার ৮৫১ টন নারিকেল, ছয় হাজার ২১ হেক্টর জমিতে ৯৯ হাজার ৬২৯ টন জাম উৎপাদন হয়েছে।
এছাড়া ১৯ হাজার ৬১৬ হেক্টর জমিতে চার লাখ ৩৪ হাজার ৫৮৩ টন আনারস, ৪৪ হাজার ২৩৭ হেক্টর জমিতে ১৬ লাখ ৯১ হাজার ২০৪ টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, চুয়াডাঙ্গার আবুল কালাম আজাদ আম্রপালি জাতের আম চাষ করে বছরে সাত থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করেন।
একই জেলার কাদের বেপারী (কলা কাদের) জৈবপ্রযুক্তিতে কলা চাষ করে ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। তিনি এলাকার প্রায় এক হাজার বসতবাড়িতে রঙিন সাগরকলা চাষ করেছেন।
পাবনার ঈশ্বরদী মা-মণি খামারের বাদশা (পেঁপে বাদশা) পেঁপে ও শরিফা চাষ করে বছরে আট থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করেন। মাত্র ১.৫ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ শুরু করলেও বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ বিঘা। এসব চাষীর সফলতার খবর শুনে অনেকেই এখন ফল চাষে ঝুঁকছেন।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, কানাডা, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের ফল রফতানি হচ্ছে। বিশেষ করে আনারস (হানিকুইন জাত), আম, পেঁপে, লটকন, লেবু, সাতকড়া, কুল, জলপাই, আমড়া প্রভৃতি ফল বিদেশে রফতানি হচ্ছে।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ এখন শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদনের দেশের কাতারে রয়েছে। বর্তমানে চালের অভাব নেই, এখন দরকার জনগণের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিমানসম্পন্ন খাবার। নিরাপদ ও পুষ্টিমান খাবার নিশ্চিতে ফল বিরাট ভূমিকা রাখে। এ কারণে আমরা ফল উৎপাদনে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।
তিনি বলেন, দেশে ফলের উৎপাদন বাড়লে নিজস্ব পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত ফল বিদেশে রফতানি করে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব।
বিজনেসটুডে২৪